সিলেটে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মহাসংকট!

সিলেট

একে মহাসংকটই বলা যায়। একদিকে এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ধনুক ভাঙা পণ, অন্যদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সামাল দিতে না পারার বিষয়টি মহাসংকটই বটে! তারা চান নির্বাচনে লড়তে আর কেন্দ্র চায় বর্জন। তবে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তকে পাত্তাই দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। তারা নির্বাচনমুখি। ভোটের মাঠ ছাড়তে রাজি নয় মোটেও। নির্বাচনমুখি নেতাদের কারণে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের কাছেও খুব একটা পাত্তা পাচ্ছেনা।

আগামী ২ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সিলেটের একটি উপজেলা, একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলটি অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিলেও স্বতন্ত্রের ব্যানারে এই দলের অন্তত ১৬জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

অথচ এই সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ধনুক ভাঙা পণ করে বসেছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। তবে তাদের সেই পণ কিন্তু তৃণমূল নেতৃবৃন্দেরও, একথা বলা যায়না মোটেও।

যেমন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিলেটসহ সারাদেশে স্বতন্ত্রের ব্যানারে অসংখ্য বিএনপি নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাদের অনেকে জিতেছেনও।

এবার আগামী ২ নভেম্বর সিলেটের একটি উপজেলা, একটি পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এসব নির্বাচনে কেন্দ্র এবং বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ব্যবস্থা নেয়ার মতো কঠোর চোখ রাঙানী উপেক্ষা করেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন অন্তত ১৬ বিএনপি নেতা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে মাঠের নেতাদের মতের যে পার্থক্য যোজন যোজন- এ থেকেই তা স্পষ্ট প্রমাণিত।

২ নভেম্বর সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানপ্রার্থী সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি।

তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে স্বতন্ত্রের ব্যানারে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম।

শুধু চেয়ারম্যান পদেই নয়, ভাইস চেয়ারম্যান পদেও লড়ছেন বিএনপির অন্তত তিন নেতা। তারা হলেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান গয়াছ মিয়া, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল মিয়া ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুছলিমা আক্তার চৌধুরী।

একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনেও আছেন বিএনপির প্রার্থী। তবে স্বতন্ত্রের ব্যানারে।

বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আকদ্দুছ আলী ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ ঘরনারই রাজনীতিবিদ মুহিবুর রহমান।

আর বিএনপি থেকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন, যুক্তরাজ্যের নিউহাম বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক  মুমিন খান মুন্না, যুক্তরাজ্যের ওল্ডহ্যাম বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মতিউর রহমান সুমন, বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন ও সমছু মিয়া।

এছাড়াও কাউন্সিলর পদেও স্বতন্ত্রের আড়ালে প্রচুর বিএনপি নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

গোয়াইনঘাটের ৪ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আছেন বিএনপি প্রার্থীরা। তবে যথারীতি তারা স্বতন্ত্রের ব্যানারে। দলের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে চয়ারম্যানপ্রার্থী হয়েছেন বিএনপির ৬ নেতা। তারা হলেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও  উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি হামিদুল হক ভূঁইয়া বাবুল, মধ্য জাফলং ইউনিয়নে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শাইদুর রহমান, পশ্চিম জাফলংয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল মুনিম মুন্সি ও আব্দুল মালিক, সদর ইউনিয়ন পরিষদে উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান এমএ রহীম ও মো. হোসাইন।

এছাড়াও ইউনিয়নগুলোর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই সদস্য পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন একাধিক বিএনপি নেতা।

তবে বিএনপির তৃণমূলকে নির্বাচন থেকে নিবৃত্ত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় এবং সিলেট জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়ে তারা এখন অপেক্ষায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের। আগামী ১৭ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন।

নেতৃবৃন্দের প্রত্যাশা, বিএনপির যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, সেদিন তারা প্রত্যাহার করে নিবেন। না নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকিও আছে।

এ ব্যাপারে সিলেট প্রতিদিনের সাথে আলাপকালে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। এমনকি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। তবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনমুখি হলেও কেন্দ্রের ধনুকভাঙা পণ আর ভাঙছেনা। এ অবস্থায় আওয়ামী ঘরানার রাজনীতিবিদদের মতে, এই সরকারের অধিনে যে নির্বাচন সুষ্ঠ এবং সুন্দর হয়, বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দই তার স্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছেন। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। কিন্তু কেন্দ্র তা মোটেও চায়না।

এ অবস্থায়, নির্বাচন বর্জনের বিএনপির সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা পাত্তা পাচ্ছেনা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *