সবাই ঢাকায়। চূড়ান্ত লবিং। নৌকার জন্য লড়াই। নৌকা পেলেই পাস- এমন ধারণা প্রার্থীদের। এ কারণে নৌকার প্রার্থী হতে চালিয়ে যাচ্ছেন চূড়ান্ত চেষ্টা। এ নিয়ে এলাকায় সরগরম। নৌকা পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও ঢাকায় অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও ছুটে গেছেন ঢাকায়। সিলেটের প্রবাসী এলাকা বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর। প্রবাসী এ দুটি এলাকার মধ্যে বিশ্বনাথে এবার প্রথমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচন।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বনাথের মানুষের স্বপ্নের দাবি ছিল পৌরসভা। সেটি এখন হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আর ওসমানীনগর উপজেলায় এবার দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে দুটি এলাকার নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। আগামী ২রা নভেম্বর এ দুটি এলাকায় নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে নানা মেরূকরণ দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী একক ভাবে ছাড় পাচ্ছেন না। শক্ত লড়াই গড়ে তোলার আভাস দিয়েছেন স্বতন্ত্ররাও।
বিশ্বনাথ পৌরসভায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের তরফ থেকে বর্ধিত সভা করা হয় গত ২৪শে সেপ্টেম্বর। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বর্ধিত সভায় একে একে ১০ জন প্রার্থী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেতে নিজেদের নাম ঘোষণা করেন। তবে- এর মধ্যে ৯ জন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তারা এখন নৌকার জন্য লড়াই করছেন। তদবির করছেন।
এরা হচ্ছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ সুমন, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল জালাল, যুগ্ম সম্পাদক আলতাফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আখদ্দুস আলী, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী মজনু, লন্ডন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রোশন চেরাগ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান লিলু ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মহব্বত আলী জাহান। এসব প্রার্থীকে নিয়ে এ পর্যন্ত দলের অভ্যন্তরে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার কারণে ফারুক আহমদ ও আব্দুল আজিজ সুমন রয়েছেন আলোচনায়।
তবে- বাদ যাচ্ছেন না প্রবাসী নেতারাও। প্রবাসী নেতা মোহাম্মদ আলী মজনু ও আব্দুর রোশন চেরাগ আলীও রয়েছেন আলোচনায়। ইতিমধ্যে তাদের পক্ষে প্রচারণায়ও নেমেছেন সমর্থকরা। তবে নৌকার টিকিট না পেলেও প্রবাসীদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেতে লড়াইয়ে নেমেছেন ৬ নেতা।
গত ২২শে সেপ্টেম্বর ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় মোট ৬ জন প্রার্থী নিজেরাই নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি, ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান নাজলু, যুগ্ম সম্পাদক জাবেদ আহমদ আম্বিয়া ও ওসমানীনগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুর রহমান সোহেল। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, জগলু চৌধুরী গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কারণে এবার নৌকা পাওয়া তার জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। তবে- নৌকার প্রার্থী হলে তিনি ফ্যাক্টর হতে পারেন। গতবার তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও মাত্র ৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন।
তবে- সুযোগ রয়েছে জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপির। তার পক্ষে ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের একাংশের নীরব সমর্থন রয়েছে। নৌকা পেলে তিনিও জয়ের মুখ দেখতে পারেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন। গতবার নৌকার টিকিট পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান। বিদ্রোহী থাকায় তিনি পরাজিত হন। দলের নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় ভাবে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও ভোটের মানুষ হিসেবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ সবসময় তার বিরোধী থাকার কারণে গেল বার নির্বাচনে তিনি সুবিধা করতে পারেননি।
আলোচনায় আছে ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান নাজলুর নামও। ওসমানীনগর টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন নিয়ে তিনি বিতর্কের মুখে পড়ায় তাকে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন খোদ দলীয় নেতাকর্মীরা।
তবে- নাজলু নৌকার টিকিট পেতে সবচেয়ে বেশি লবিংয়ে ব্যস্ত। এবার নৌকার টিকিট তার জন্য চ্যালেঞ্জের বলে জানিয়েছেন তার অনুসারীরা। জাবেল আহমদ আম্বিয়া ওসমানীনগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তরুণ নেতা হলেও রাজনৈতিক মাঠে তিনি এরই মধ্যে তার অবস্থান সুসংহত করেছেন। আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন। দলীয় প্রতীক নৌকার জন্য তিনিও ঢাকায় অবস্থান করছেন। আলতাফুর রহমান সোহেল ওসমানীনগর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তার অবস্থান এলাকায় সুসংহত।
এ ছাড়া- তার ভাই আতাউর রহমান মানিক ছিলেন গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। ফলে ভোটের মাঠে তাদের সুসংহত অবস্থান রয়েছে।
এদিকে- ওসমানীনগর উপজেলা ও বিশ্বনাথ পৌরসভার দলীয় প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ঢাকা গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান। আগামীকাল দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে ঘোষণা করা হবে এ দুটি এলাকার নৌকার প্রার্থীর নাম।
শেয়ার করুন