করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দুইবছর পর গেল ঈদুল ফিতরে সিলেটে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের ঢল নেমেছিল। ঈদের ছুটিতে পর্যটনখাতে ব্যবসা হয়েছিল শত কোটি টাকার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জাফলংয়ে টোল আদায় নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটলে এবং পরবর্তীতে বন্যা না হলে ব্যবসায়ের পরিমাণ দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হতো। কিন্তু ঈদুল ফিতরের পরপর সিলেটজুড়ে দু’দফা বন্যায় হওয়ায় মারাত্মক ধ্বস নেমেছে পর্যটনখাতে। বন্যার কারণে এবার সিলেটমুখী হননি পর্যটকরা। ফলে ঈদের ছুটিতে পর্যটকশূণ্য রয়েছে সিলেটের সবকটি পর্যটনকেন্দ্র। এমন পরিস্থিতিতে পর্যটনখাতে প্রতিদিন দুই কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে ব্যবসায়িক নেতারা জানিয়েছেন।
সিলেটের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জাফলং। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ঈদের তৃতীয় দিনেও জাফলং ছিল পর্যটকশূণ্য। হাতে গোনা কয়েক শ’ পর্যটক বেড়াতে গিয়েছিলেন জাফলংয়ে। এমন পরিস্থিতিতে পানিতে ডুবে মাহিদুল ইসলাম নামের একজন মারা গেছেন। এ পর্যটন এলাকায় অন্যান্যবার এমন সময়ে পর্যটকের ভিড় লেগে থাকতো। পুরো জাফলংজুড়ে বিরাজ করতো উৎসবের আমেজ। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতিতে জাফলংয়ের মতো একই অবস্থা সিলেটের সাদাপাথর, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, পান্তুমাই, লালাখালসহ সকল পর্যটনকেন্দ্রের।
বিকেলে স্থানীয়দের কেউ কেউ পরিবার নিয়ে বেড়াতে যান সিলেট নগরের পার্শ্ববর্তী চা বাগানগুলোতে।
এদিকে, পর্যটক না আসায় সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। বিশেষ করে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা বেশি হতাশ হয়েছেন। পর্যটক আকর্ষণ করতে ঈদের আগেই তারা হোটেল-মোটেল সংস্কার করে রেখেছিলেন। অনেক হোটেলের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বিশেষ অফারও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার কারণে পর্যটকরা না আসায় ব্যবসায়ীদের হতাশ হতে হয়েছে। একই অবস্থা পরিবহন ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ও। পর্যটক সমাগম হলে সিলেটের রেস্টুরেন্ট ও রেন্ট-এ-কার ব্যবসা জমে ওঠে। কিন্তু এবার ঈদে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছে। অনেক মালিক কেবলমাত্র পর্যটকদের আশায় ঈদের ছুটিতে রেস্টুরেন্ট খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু পর্যটক না আসায় তাদেরকে লোকসানের খাতা দীর্ঘ করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছেন প্রতিদিন এ খাতে প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
সিলেট হোটেল মোটেল এন্ড গেস্ট হাউস অনার্স এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রায় ৫শ’ আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। ঈদ কিংবা যে কোন উৎসবের ছুটিতে এসব হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউস পর্যটকে পরিপূর্ণ থাকে। গেল ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অনেক পর্যটক সিলেটে বেড়াতে এসে হোটেলে সিটই পাননি। কিন্তু এবার বেশিরভাগ হোটেল খালি। যেখানে ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটক সমাগম হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এসেছেন মাত্র হাজার খানেক লোকজন।
সিলেট হোটেল মোটেল এন্ড গেস্ট হাউস অনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব জানান, এবার ঈদুল আযহার ছুটিতে সিলেটে পর্যটক সমাগম হয়নি। বেশিরভাগ হোটেল মোটেল খালি। এমনও হোটেল আছে যেখানে একটি রুমও ভাড়া যায়নি। হোটেলগুলোতে অগ্রিম কোন বুকিংও নেই।
শোয়েব আরও জানান, দুই ঈদের ছুটি ও বর্ষা মৌসুমে সিলেটে পর্যটকদের ঢল নামে। বর্ষা মৌসুমে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সৌন্দর্যতে ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়। তাই পর্যটকরাও ছুটে আসেন। তাই ঈদ ও বর্ষায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ভাল ব্যবসা করে থাকেন। এবার বন্যা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। সিলেটকে পর্যটকশূণ্য করে দিয়েছে বন্যা। এতে এ খাতের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
শেয়ার করুন