সিলেটে পর্যটন এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা, হতাশ পর্যটকরা

সিলেট

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি যখন অনেক উচ্চতায় সেই সময় সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে নেটওয়ার্ক বিড়াম্বনায় পড়তে পর্যটকদের।নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে পর্যটকরা স্বজনদের কাছে তাদের অবস্থানের খবরটুকু পৌঁছাতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।কখনো স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী হারিয়ে যাচ্ছেন আবার কখনো বন্ধুর কাছ থেকে বন্ধু।কখনো বাবা-মায়ের কাছ থেকে হারিয়ে যায় ছেলে-মেয়েরা।এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় পর্যটকদের।তিন-চারদিনের জন্য থাকতে এসেও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে অনেক পর্যটক একদিনের বেশি থাকছেন না বলে জানিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ

তবে দ্রুত পর্যটন এলাকায় নেটওয়ার্ক জোরদারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

সিলেটের সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলং ভারত-বাংলাদেশ মেঘালয় পর্বতের প্রদেশে অবস্থিত। প্রাকৃতির অপরূপ লীলা ভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং।প্রতিদিনই হাতছানী দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের।ভ্রমণ পিপাসুরা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ভীড় জমাচ্ছেন জাফলংয়ে।কিন্তু সেখানে মুঠোফোনে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটায় বেড়াতে এসে প্রায়ই স্বজন হারিয়ে ম্লান হয়ে যাচ্ছে অনেকের ভ্রমণের আনন্দ।

শুধু জাফলং একই অবস্থা কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথরে।সিলেট শহর থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরত্বের সাদাপাথরে গিয়ে নেটওয়ার্ক সমস্যায় ভোগতে হয় ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের।বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তবর্তী পর্যটন স্পটগুলোতে বাংলাদেশ সীমান্তে এদেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকলেও এই পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ৫শ মিটারের মধ্যেই রয়েছে ভারতের শক্তিশালী মোবাইল নেটওয়ার্ক।যার বিস্তৃতি বাংলাদেশের এক কিলোমিটার ভেতর পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পবিত্র ঈদুল ফিতর ছুটি কাটাতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবার নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত সিলেটে ছুটে আসেন পর্যটকরা।ঈদের ছুটিতে সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলং ও সাদা পাথরে ঢল নামে কয়েক রাখ পর্যটকদের।

ঈদের ছুটির পর গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকায় এই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের পদাচরণায় মুখর।কিন্তু বার বার পড়তে হচ্ছে নেটওয়ার্কের বিড়াম্বনায়।

ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে জাফলংয়ে ঘুরতে আসা রুমান আহমদ নামে এক পর্যটক জানান,তারগ্রামের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়িয়া।সেখান থেকে তার মা মুঠোফোনে কথা বলার জন্য কয়েকবার কল দিলেও তার ফোনে কল ঢুকেনি।প্রায় ২০-২৫ বার চেষ্টা করার পর তার ফোনে কল ঢুকে।তাও আবার কয়েক সেকেন্ড কথা বলতে পেরেছেন।

বান্ধবীদের সাথে সাদাপাথর ঘুরে আসা শিউলি বেগম বলেন, এখানকার পরিবেশ অপরূপ।যে কেউ এখানে আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।এটি সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। আমি এই জায়গার প্রেমে পড়েগেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এখানকার মোবাইল নেটওয়াকিং ব্যবস্থা খুব খারাপ।কেউ যদি একটু চোখের আড়াল হয় তাহলে বিপাকে পড়তে হবে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পর্যটক ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, যারা বিভিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানীর লোক রয়েছেন বড় বড় বিলবোর্ড ও বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলবেন না দেশের সব জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। কারণ বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেন সব জায়গায় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় তাহলে এখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না কেন? এখানে কারা প্রতারণা করছে বিজ্ঞাপন প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান? না কি বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান?

আরও কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করে বলেন, দলবেঁধে ঘুরতে আসলে সবসময় একসাথে থাকা যায় না। কেউ ছবি তুলতে কিংবা সৌন্দর্য উপভোগ করতে একেক দিকে ছুটে।সেক্ষেত্রে চোখের আড়াল হলেও ফোন করলেই সহজে যোগাযোগ করা যায়। কিন্তু এখানে সে সুযোগ খুব কম।কখনো নেটওয়ার্ক পায় আবার কখনো পায় না।

পর্যটকদের এমন সব অভিযোগের বিষয় জানতে জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর রতন শেখ’র সাথে যোগাযোগ করতে হলেও বেশ কয়েকবার নেটওয়ার্কের সমস্যা পড়তে এই প্রতিবেদককে।

জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর রতন শেখ বলেন, জাফলংয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। ঘুরতে এসে যদি নেটওয়ার্ক না পায় তাহলে ছেলে-মেয়ে বাবা-মাকে খুঁজে না পেয়ে কাঁদতে শুরু করবে।আর বাবা-মা সন্তানকে না পেয়ে হারিয়ে গেছে বলে খুঁজতে শুরু করবে।তাই দ্রুত এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসেন।বিশেষ করে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার এই তিনদিন পর্যটক থাকে। এসময় দেখা যায় স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী হারিয়ে গেছে; বন্ধুর কাছ থেকে বন্ধু হারিয়ে গেছে। নেটওয়ার্কিংয়ে সমস্যার জন্য কিন্তু এরা হারিয়ে গেছে।তখন আমাদের মাধ্যমে খুঁজে পান আত্মীয় স্বজনদের।

এবিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.মজিবর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মোবাইল অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ফোন অপারেটর, বিটিআরসি এবং টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দেখবো, এ বিষয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা। যদি থেকে থাকে সেক্ষেত্রে আমরা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *