সিলেটে প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও চা শ্রমিকদের মধ্যকার বৈঠক ফের ব্যর্থ হয়েছে। রোববার (২১ আগস্ট) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতির আহ্বান জানানো হলে আবারও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা তার অধিনস্থ ইউনিটগুলোর শ্রমিকদের নিয়ে কাল (সোমবার) বাগানে ফিরবেন বললেও তিনি তাঁর কথা কতটা রাখতে পারবেন এ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। কারণ- বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ চা শ্রমিক প্রশাসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
রোববার (২১ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) ফরিদ উদ্দিন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ উদ্দীন আহমদ ও জেলা সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলার সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, স্থানীয় সরকার সিলেটের উপ পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইমরুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুশরাত আজমিরি হক এবং চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা ও অন্যান্য চা শ্রমিক ইউনিট এবং পঞ্চায়েত প্রধান।
বৈঠকে সিলেটের জেলা প্রশাসক চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন বলে চা শ্রমিক নেতাদের জানান। তিনি বলেন- প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে চা শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। বৈঠকে এর সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু উপস্থিত চা শ্রমিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে পরবর্তীতে তাদের সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানান।
বৈঠক শেষে রাত দশটায় চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, আমাদের সঙ্গে আবারও বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনা শুনেছি। এ নিয়ে আমাদের অন্যান্য ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবো। পরবর্তীতে আমাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।
তবে রাজু গোয়ালা এমন কথা বললেও উপস্থিত বেশিরভাগ চা শ্রমিক ও পঞ্চায়েত প্রধানরা প্রশাসনের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন- আমরা তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছেন। আমরা এও বলেছি- এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের নিয়ে বৈঠক করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফিরলে তাদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন।
এর আগে শনিবার (২০ আগস্ট) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের আহ্বানে চা শ্রমিক নেতারা ফের আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানালেও সাধারণ শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন। ফলে রোববার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে তারা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
উল্লেখ্য, ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় দৈনিক মজুরি উন্নতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নেমেছেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর ১৩ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। আন্দোলন থামাতে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি। চলমান জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ গত শনিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দফতর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বৈঠকে বসেন।
তিনপক্ষীয় এই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় শনিবার রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি। সে আহ্বান মেনেও নেন স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা। কিন্তু সাধারণ চা শ্রমিকরা বেঁকে বসেন এবং সিলেট বিভাগের রোববার দিনভর কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ, মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা।
শেয়ার করুন