সীমা বেগম পপি। বয়স অনমানিক ৩৮। হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বাড়ি। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরে। লোকজনের পকেট ও ভ্যানিটি ব্যাগ কাটা তার মূল পেশা।
পুলিশ বলছে- মানুষের পকেট কাটার পাশাপাশি পপি জড়িয়ে আছেন মাদক ব্যবসা, অসামাজিক কর্যকলাপ, মারধর ও ছিনতাইসহ নানা অনৈতিক কাজে। বার বার ধরা খান পুলিশ ও জনতার হাতে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দ্রুত বেরিয়ে আসেন জেল-হাজত থেকে। নবউদ্যমে ফেরেন পুরনো অন্ধকার জগতে।
এতকিছুর পরও পুলিশ তার বিরুদ্ধে ‘অভিযোগকারী’ নেই বলে তাকে একরকম ছাড় দেয়। পুলিশ বলছে- উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষীর অভাবে তিনি দ্রুত জামিন পান।
পপি সর্বশেষ ধরা খেয়েছেন সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে। এক মাহিলার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে পপি হাতেনাতে ধরা পড়েন। এসময় স্থানীয় জনতা ৯৯৯-্এ কল দিয়ে পুলিশের হাতে তাকে সোপর্দ করেন।
সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, ৯৯৯-এ কল পেয়ে আমদের পুলিশ তাকে আটক করে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগকারী পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সীমা বেগম পপির বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বামুরা গ্রামে। তিনি বিবাহিত। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। নগরীর শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ৪ নং রোডের বিলের পার এলাকায় গড়ে তুলেছেন ৪ তলা বাসা। সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন পপি। সেখানে রাত-দিন রয়েছে পরিচিত-অপরিচিত মানুষের আনাগুনা।
বাসার পাশেই পপি একটি মোদি দোকান ও খামার রয়েছে। তার স্বামী সেই দোকান ও খামার দেখাশুনা করেন। আর ওসমানী হাসপাতাল এবং নগরীর জিন্দাবাজার ও বন্দরবাজারে পকেটমার হিসেবে পপির পরিচিতি। বিশেষ করে ওসমানী হাসপাতালে তার দৌরাত্ম্য বেশি। সকাল হলেই বোরকা পরে নগরীর অলিগলি ও পথের পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কেটে ঢুঁ মারেন তিনি। ঘুরে বেড়ান ওসমানীসহ সরকারি-বেসরকাীর বিভিন্ন হাসপাতালে। সুযোগ বুঝে কৌশলে ছিনিয়ে নেন স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও টাকা-পায়সা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন পপি। কিন্তু প্রত্যেকবারই জেল থেকে বেরিয়েই পুরোনো পেশায় জড়িয়ে পড়েন।
পুলিশ জানায়, পপির বিরুদ্ধে সিলেটের শাহপরাণসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় অর্ধশত মামলা রয়েছে। তার মূল পেশা চুরি। কিন্তু পাশাপাশি ছিনতাই, অসামাজিক কাজ, মাদক কেনাচেনাহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তিনি। ২০১৯ সালের ৩০ মে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে পপি ও তার সহযোগী স্বপ্নাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন পুলিশ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করে। ওইদিনই তারা বেরিয়ে আসেন জামিনে। একই বছর ৩০ জুন নগরীর জিন্দাবাজার সিটি সেন্টারের সামনে থেকে স্বপ্না ও পপিকে আটক করে পুলিশ। থানাহাজতে তাদেরকে এক রাত আটকেও রাখা হয়। পরে রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। প্রসিকিউশনের মাধ্যমে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে সেখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসেন পপি ও স্বপ্না। বিভিন্ন সময় আরও অন্ততঃ ৫ বার পুলিশ এবং জনতার হাতে ধরা খয়েছেন পপি। কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তার অপকর্ম।
এছাড়াও একটি মারামারির ঘটনায় সিলেটের শাহপরাণ থানায় পপির বিরুদ্ধে মামলা। থানাসূত্রে জানা গেছে, ওই মামলায় চার্জশিটও হয়েছে। পপি একটি কিশোর গ্যাং পোষেণ বলেও জানা গেছে। সেই গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেন তার ছেলে অন্তর।
সূত্রমতে, পপি ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা পুলিশের হাতে আটকের পর তাদের শেল্টারদাতাদের খবর দেয়া হয়। তখন তারা থানাপুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে অনেক সময় থানা থেকেই ছাড়িয়ে নেন। আবার কখনও প্রসিকিউশনের মাধ্যমে আদালতে প্রেরণ করা হয় এবং পরবর্তীতে সহজেই তারা বেরিয়ে আসেন।
শেয়ার করুন