সিলেটে বন্যার রেশ কাটেনি : বাড়ছে পানিবাহিত রোগ, আক্রান্ত সাড়ে ২২ হাজার

সিলেট

বন্যার রেশ এখনো কাটছেনা সিলেটে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৫ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত ১৫৬ জন আর বাকীরা আর.টি.আই, চর্মরোগ ও চোখের প্রদাহ সহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেটে ৭৭ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৪১৮ জন। এদের মধ্যে সিলেট জেলায় ৪ হাজার ৫৭২ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৯৩১ জন, হবিগঞ্জ জেলায় ৭ হাজার ৮৫৭ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৬ হাজার ৫৮ জন পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট বিভাগে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। গেল বন্যায় বিভাগে মারা গেছেন ৭৭ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলার ২০ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ২৯ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৯ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ১৯ জন রয়েছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গেল ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৪৫ জন। এরমধ্যে সিলেট জেলার ৫৯ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৫৬ জন, হবিগঞ্জ জেলার ১১৫ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ১১৫ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৪৫ জন। এরমধ্যে ১৫৬ জন ডায়রিয়া ও বাকীরা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সিলেট জেলার ৫৯ জনের মধ্যে ২৯ জন ডায়রিয়া ও ৩০ জন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সুনামগঞ্জের ৫৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। হবিগঞ্জের ১১৫ জনের মধ্যে ৪১ জন ডায়রিয়া ও ৭৪ জন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মৌলভীবাজারে ১১৫ জনের মধ্যে ৩০ জন ডায়রিয়া ও ৮৫ জন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
জানা গেছে, বর্তমানে ডায়রিার প্রকোপ কিছুটা কমলেও পানিবাহিত অন্যান্য রোগের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৩৪৫ জন পানিবাহিত নতুন রোগীর মধ্যে ১৫৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। বাকী ১৮৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন অন্যান্য রোগে।
সরকারী পরিসংখ্যানে এই হিসাব দেখা গেলেও বাস্তবে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। এছাড়া বিভিন্ন ফার্মেসীতে বিক্রি হচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগের ঔষুধ। নগরীর বস্তি-কলোনী এলাকার কয়েকটি ফার্মেসীর ঔষুধ বিক্রেতাদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ফার্মেসীতে পানিবাহিত নানা রোগের ঔষুধ নিচ্ছেন অনেকে। এরমধ্যে চর্মরোগ, জ¦র সর্দি-কাশি এবং ডায়রিয়া-আমাশয়ের ঔষুধ বিক্রি হচ্ছে বেশী।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৩৯ টি উপজেলার মধ্যে ৩৩ টি উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়। এসব বন্যাদূর্গত এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৪২৭ টি মেডিকেল টীম শুরু থেকে কাজ করে আসছে। বর্তমানেও এসব মেডিকেল টীম পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধে মাঠে কাজ করছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১৩৯টি, সুনামগঞ্জে ১২৩টি, হবিগঞ্জে ৯১টি ও মৌলভীবাজারে ৭৪টি মেডিকেল টীম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনো সক্রিয় রয়েছে। ইতিহাসের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে সুনামগঞ্জ জেলা এগিয়ে থাকলেও পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের দিক থেকে এগিয়ে আছে হবিগঞ্জ জেলা এবং ২য় স্থানে রয়েছে মৌলভীবাজার। হবিগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮৫৭ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৫৮ জন। বন্যায় মৃত্যুর দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের দিক থেকে সবার নিচে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। এখানে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৩১ জন। এদিকে ৪ হাজার ৫৭২ জন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সিলেট জেলার অবস্থান ৩য়।
জানা গেছে, সিলেটে পানিবাহিত রোগের সংখ্যা বাড়লেও কমছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৬ জন। গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সিলেট বিভাগে দৈনিক ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭৪ জন। পরবর্তী কয়েক দিন থেকে কমছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের রিপোর্টে দেখা গেছে নতুন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে ১৫৬ জন।
এদিকে গত ১ সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮১ জন। গত ১ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৮৭৭ জন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারী থেকে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৮০৮ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২ জনের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা: হিমাংশু লাল রায় জানান, সিলেটে পানিবাহিত রোগের সংখ্যা বাড়লেও তা আশঙ্কাজনক নয়। আমাদের মেডিকেল টীম শহর থেকে শুরু করে গ্রামে গঞ্জে কাজ করছে। আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে পর্যাপ্ত ঔষুধ সামগ্রী রয়েছে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *