বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আর পেছানো হবে না। আগামী ৯ জুলাই থেকে যে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে সেগুলো রুটিন অনুযায়ী যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।
আজ বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগের চার জেলায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। ৩০ জুন থেকে ওই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ৯ জুলাই থেকে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো যথারীতি হবে বলে তখন জানানো হয়। যেহেতু এখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তাই যথারীতি নির্দিষ্ট তারিখ থেকে পরীক্ষাগুলো হবে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের একাধিক কলেজের অধ্যক্ষ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ৮ জুলাইয়ের আগে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন কিছু কেন্দ্রে আশ্রয়কেন্দ্র থাকলেও পরীক্ষার আগেই সেগুলো খালি হয়ে যাবে বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা আশা করছেন।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ নুরুজ্জামান বলেন, তাঁদের উপজেলায় চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট পরীক্ষার্থী ৪৩২। উপজেলায় একটিই পরীক্ষাকেন্দ্র—কাছিম আলী সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি এখন বন্যাদুর্গত ব্যক্তিদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তাই আশ্রয়কেন্দ্রও দ্রুত খালি হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা গ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না।
বানভাসি লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট নগরের ২৪টি ওয়ার্ড ও জেলার ১৩টি উপজেলায় কমবেশি এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় অনেক পরীক্ষার্থীর বাড়িঘরও তলিয়ে গেছে। স্বাভাবিক কারণে সবার পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে। অবশ্য এখনো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এখনো অনেক গ্রাম প্লাবিত থাকায় লোকজন উপজেলা সদর ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন আছেন। নতুন করে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল না হলে ৯ জুলাইয়ের আগেই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
শিক্ষা বোর্ড–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন বিভাগের চার জেলা। পুরো বিভাগের ৩০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজার ৭৯৫ জন পরীক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৫৯০ জন ছাত্র এবং ৪৯ হাজার ২০৫ জন ছাত্রী। এর মধ্যে সিলেটে ৩৫ হাজার ৬২০, সুনামগঞ্জে ১৫ হাজার ৬৬৪, মৌলভীবাজারে ১৬ হাজার ৫০৮ ও হবিগঞ্জে ১৫ হাজার ৩ জন পরীক্ষার্থী আছে। বিভাগের ৪ জেলায় মোট ৮৭টি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে। এর মধ্যে সিলেটে ৩৩টি, সুনামগঞ্জে ২২টি, মৌলভীবাজারে ১৪টি ও হবিগঞ্জে আছে ১৮টি।
বোর্ড সূত্র জানায়, সিলেটে ৮ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষা পেছানোয় বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি (আবশ্যিক) প্রথম পত্র ও ইংরেজি (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্র—এই চার বিষয়ের পরীক্ষা পরে অনুষ্ঠিত হবে। তবে ৯ জুলাই থেকে যথারীতি আগের রুটিনে পরীক্ষা হবে। ওই দিন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আবশ্যিক) বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান রমা বিজয় সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ৮ জুলাই পর্যন্ত যেসব বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, সেসব বিষয়ের নতুন রুটিন শিগগির দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে নতুন করে রুটিন দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে ৯ জুলাই থেকে পূর্বনির্ধারিত অর্থাৎ আগের রুটিনেই সবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২৯ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দেয়। ৮ জুনের পর বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সবশেষ ১৭ জুন থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে সিলেট নগরের ২৪টি ওয়ার্ডসহ ১৩টি উপজেলা ও সুনামগঞ্জের ১৩টি উপজেলা কমবেশি প্লাবিত হয়। এ অবস্থায় আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট বিভাগের এইচএসসি, মাদ্রাসা ও কারিগরি পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে। এখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
শেয়ার করুন