সিলেটে দ্রুত গতিতে বাড়ছে চোখ ওঠা বা কনজাংকটিভাইটিস রোগীর সংখ্যা। আর এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ার সাথে সাথে ফার্মেসিগুলোতে দেখা দিয়েছে চোখের ড্রপের সংকট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ রোগীরা।
এদিকে অনেক ফার্মেসির মালিক-কর্মীরাও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসাসেবায়ও ভোগান্তি বাড়ছে।
সিলেট নগরের সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ জাকি আলম সিলেটটুডেকে বলেন, ‘‘আমার গতকাল বিকেল থেকে চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। চোখের ড্রপ কিনতে গিয়ে নগরের তালতলা, চৌহাট্টা, মিরবক্সটুলা এলাকার প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ঔষধের দোকানে চোখের ড্রপের খোঁজ করেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি।
‘‘যদিও একটি ড্রপ উইমেনস মেডিকেল কলেজের সামনে পেয়েছি, সেটিও আমি যে গ্রুপের খুঁজছিলাম সেটি নয়। অনেক কষ্ট করেও ওষুধ সংগ্রহ করতে পারিনি আমি।’ ’
‘‘এছাড়া প্রতিটির ফার্মেসির কর্মীদেরও চোখ উঠার সমস্যা রয়েছে। এতে করে তারাও সেবা দিতে যেয়ে সমস্যায় পড়ছেন। এত চোখ ওঠা রোগী আগে কখনো দেখিনি।’’
এ ভুক্তভোগী কথার সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরের ডাক্তার ও ফার্মেসি পাড়া খ্যাত স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকার ফার্মেসিগুলোতেও মিলছে না চোখের ড্রপ। বেশ কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরেও ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।
ফার্মেসি মালিকরা বলছেন, চোখ ওঠা রোগীর অনুপাতে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ড্রপ সরবরাহ করতে পারছেন না।
স্টেডিয়াম মার্কেটের রয়েল ড্রাগস ফার্মেসির মালিক মুবিন আহমদ সিলেটটুডেকে বলেন, ‘‘হঠাৎ চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ড্রপের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কয়েক দিন গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
একইসাথে তিনি বাজারে এই ড্রপের ঘাটতিকে সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতা বলে মন্তব্য করেছেন।
এ ব্যাপারে ঔষধ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়, সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক সিলেটুডেকে বলেন, ‘হঠাৎ করে কনজাংটিভাইটিস (চোখ উঠা রোগ) এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ঔষধের বাজারে ড্রপের কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কেননা চোখের এই ড্রপটা কোম্পানিগুলো স্টক করে রাখে না।
‘‘আর এটার খুব প্রয়োজনীয়তা দেখা না দিলে বেশি ব্যবহারও হয় না। তাই হঠাৎ করে এতো রোগী সংক্রমিত হওয়ায় ঔষধের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য। আগামী দুই একদিনের মধ্যে বাজারে ঔষধ আসতে শুরু করবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি আজই প্রায় ১০টা কোম্পানির সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন আগামী দুই একদিনের মধ্যে তারা এই ড্রপ তারা বাজারজাত করতে পারবে। আর চোখের ড্রপ অন্যান্য ঔষধের মতো তৈরির পরপরই বাজারজাত করা যায় না, এগুলো তৈরির পর মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাব টেস্টিং করার পর বাজারজাত করতে হয়। তাই চোখের এই ড্রপটা বাজারে আসতে কিছুটা সময় লাগছে।’’
এদিকে প্রতিদিনই সিলেটের সরকারি-বেসরকারিসহ প্রতিটি হাসপাতালে, বিশেষ করে চক্ষু হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু।
সাকিব আহমেদ মিঠু নামে এক রোগী সিলেটটুডেকে বলেন, ‘‘হঠাৎ করে চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। গত তিনদিন চোখে ঝাপসা দেখছি। তবে এখন মোটামুটি ভালোর দিকে আছি।’’
এদিকে চোখ উঠা রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, ‘‘ঋতু পরিবর্তনের কারণে এসময় চোখের রোগবালাই হয়ে থাকে। তারমধ্যে একটি হচ্ছে চোখ ওঠা। এটি আসলে একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। কনজাংটিভাইটিস বা চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে চোখ ওঠা বলে। চোখ ওঠার মূল কারণ ভাইরাস এবং এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে। তবে চোখ ওঠায় আক্রান্ত কারও চোখের দিকে তাকালে কারোর চোখ ওঠে না।
‘‘ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত চোখ কিছুদিন পর ভালো হয়ে যায় ঠিক, কিন্তু আশপাশে অনেককেই আক্রান্ত করে বা করতে পারে। তবে চোখ ওঠা রোগী মূলত সে তার নিজের জন্য সমস্যা নয়, বরং অন্যের জন্য সমস্যা। কারও চোখ ওঠা হয়তো তিন দিনে ভালো হয়ে যায়, কারোর আবার ৩ সপ্তাহ লাগতে পারে।’’
এ ব্যাপারে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী সিলেটটুডেকে বলেন, ‘‘চোখ ওঠা রোগ সাধারণত এক ধরনের ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এডিন নামক এক ধরনের ভাইরাস এই রোগের মূল কারণ। তবে এবার ধরন আমাদের কাছে কিছুটা ব্যতিক্রম বলে মনে হচ্ছে। এটা যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, তাই যার হয়েছে, তিনি চোখে হাত দেওয়ার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে তার মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হবে না।
‘‘কারণ আক্রান্তরা যদি কোনো জায়গায় হাত দেয়, সেই জায়গায় অন্যরা হাত দিলে বা স্পর্শ করলে তারাও আক্রান্ত হবে। আমরা যারা প্রতিদিন রোগী দেখছি, আমাদের হচ্ছে না। কারণ আমরা সতর্ক আছি। রোগী দেখি, হাত ধুয়ে ফেলি। রোগীও যদি বাসায় সতর্ক থাকে, তার বাসায় অন্যদের হবে না।’’
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘‘যেসব রোগী বাসায় আছেন, তাদের ব্যবহৃত রুমাল, গামছা, কাপড়চোপড় অন্যরা যাতে ব্যবহার না করে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এমন অবস্থায় রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণত ৩-৫ দিনেই মধ্যেই চোখ ওঠা রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে এই সময়ের মধ্যে ভালো না হলে তাকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এছাড়া যারা চাকরি করে ও যেসব বাচ্চা স্কুলে যায়, তাদের চোখ ওঠা রোগ হলে অবশ্যই ছুটি নিতে হবে। কারণ এটা সংক্রামক ব্যাধি।’’
শেয়ার করুন