সিলেটে বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

সিলেট

সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে দোকান সংস্কারের সময় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় আদালতে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে এ মামলা দায়ের করেন নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী সামছুজ্জামান বাদল।

মামলায় তিনি অভিযুক্ত করেছেন নগরীর দর্জিপাড়া এলাকার মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ ও কুঠির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, যতরপুর এলাকার বাসিন্দা সাইদুজ্জামান লাভলু ও আরিয়ানকে।

 

মামলার বাদি সামছুজ্জামান বাদল জানিয়েছেন, নগরীর জিন্দাবাজারে তার একটি দোকান কোটা রয়েছে। ২৩ আগস্ট তিনি দোকান সংস্কারের সময় আসামিরা  মোবাইল ফোনে তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাদা দাবি করে। কথা মতো চাঁদা না দেওয়ায় এক পর্যায়ে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ২৯ আগস্ট স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে কুমারপাড়ায় বাদি বাদলের পথরোধ করেন। পূর্বের মতো একই ভাবে তারা তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। এ সময় টাকা দিতে অপারতা প্রকাশ করলে টেনে হিচড়ে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে হাতে থাকা রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার সময় আসামিরা বাদলের স্ত্রীর গলার থেকে এ লাখ ২৮ হাজার মুল্যের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। তার অসুস্থ ছেলেকে সিএনজি অটোরিকশা থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বাদল আহত হলে তিনি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

এদিকে, এ ঘটনার দিনই কোতোয়ালি থানায় এজাহার দাখিল করেছিলেন আহত বাদল। কিন্তু পুলিশ সমঝোতার নামে শেষ পর্যন্ত মামলা রেকর্ড না করায় রোববার আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী জয়শ্রী দাস জয়া জানিয়েছেন, আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে কোতোয়ালি থানাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুনু মিয়া শ্যামল সিলেটকে বলেন, আদালতে দাখিল করা অভিযোগ এখনো থানায় এসে পৌঁছায়নি।

 

মামলার বাদি সামছুজ্জামান বাদল বলেন, বিএনপির কর্মী হওয়ার কারণে ২০১৬ সালে রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগ নেতারা তার দোকানকোটায় লুটপাট চালিয়ে ভেঙে দেয়। ওই দোকান কোটা সংস্কারের সময় তার কাছে বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে চাদা দাবি করা হয়। একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি ন্যায় বিচারের জন্য প্রথমে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। চাদা দাবি ও হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ ও কুঠির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক শ্যামল সিলেটকে বলেন,  মামলাকারী সামসুজ্জামান বাদল তার নিজের ভাই, ভাতিজাদেরও এই মামলায় আসামি করেছে। মূলত; ১৮ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ছিলাম। ওই সময় কমান্ডার আব্দুল আহাদ ১০০ টাকা হারে দোকান বন্দোবস্ত দেন। তারা ভাইদের মধ্যেও বিরোধ। এক ভাই দোকান দখল করে আরেক ভাই মামলা করতে যায়। এ ঘটনা নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় যায় বাদল। তিনি বিষয়টি আমাকে দেখে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিলে সে তার ভাইয়ের মুছলেকায় স্বাক্ষর নিয়ে দিতে বলে, নয়তো আমার বিরুদ্ধেও মামলা দিয়ে দিবে। বিষয়টি রং তামাশা হিসেবে নিলেও সত্যি সত্যি সে মামলা করে দেয়। অথচ ক’দিন আগেও সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসুর বাসায় সে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছে।

তিনি বলেন, তারা মাদকের ব্যবসা করে। তাদের মাকে দিয়েও ব্যবসা করায় জানতে পেরেছি। যে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারে, সে অন্য যে কাউকে মামলায় আসামি করতে পারে। তবে এই ঘটনার পেছনে নিশ্চিত কারো হাত আছে। তাকে ইন্দন দেওয়ার নেপথ্যে নিজ দলের দু’জনের নাম জানা গেছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোতোয়ালির ওসি তার মামলা না নেওয়ায় কমিশনারের কাছেও ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *