সিলেটে বিদ্যুৎ মামলায় দেলোয়ার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

সিলেট
সিলেটে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি করায় খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, তার দুই ভাই আনোয়ার হোসেন ও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় দেলোয়ার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা  জারি হয়েছে। তবে আনোয়ার হোসেন মামলাগুলো নিষ্পত্তির হয়েছে বলে দাবি করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিদ্যুৎ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গত ১ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত। ইতিমধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন দেয়া নিয়ে তার বিরুদ্ধে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছিল। তাছাড়া বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এ চেয়ারম্যান একবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন না করায় ইউনিয়নবাসীর তোপের মুখে পড়েছিলেন। এবার দুই ভাইসহ তিনি নিজেই বিদ্যুৎ মামলার আসামী।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিদ্যুৎ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ( যুগ্ম ও দায়রা জজ) আদালতে গত ৪ অক্টোবর মামলাগুলো দায়ে করা হয় ( নং সিআর ১৫০২/২২ ও সিআর ১৫০৩/২২)।
মামলার বাদী যথাক্রমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ তারেক ও একই বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আসিফ জুলকারনাইন। প্রথম মামলার আসামী আনোয়ার হোসেন এবং দ্বিতীয় মামলার আসামী তিনজন। তারা হলেন খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও তার দুই ভাই আনোয়ার এবং ইকবাল হোসেন।
মামলার ( নং সিআর ১৫০২/২২)  বিবরণ থেকে জানা যায়, সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার খাদিমনগর ইউনিয়নের উমদারপাড়া গ্রামের চেয়ারম্যানবাড়ীর শফিকুর রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন তার মিটার (নং ১২৪৭৫৩৬) থেকে অতিরিক্ত ৪টি তার সংযোগ দিয়ে মিটার বাইপাস করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে নিজের বাসায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। কর্মকর্তাদের ধারনা, আগস্ট ২০২০ থেকে আনোয়ার এই অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন যা গত ৪ অক্টোবর পরিদর্শনকালে ধরা পড়ে। এতে সরকারের প্রায় ২ লাখ ৭১ হাজার টাকার বেশী ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
তাছাড়া তদন্তকালে একই মিটার থেকে দৈনিক ৫/৬টি টমটমের ব্যাটারি চার্জ দেয়ার বিষয়টিরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে  আরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগসূত্রে জানা গেছে।
দ্বিতীয় মামলার ( নং ১৫০৩/২২) অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শফিকুর রহমানের নামে মিটারের ( নং ১০৩৪৯৫০২) জুন ২০২১ থেকে আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত মোট ৭৭ হাজার টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। তাদের ব্যবহৃত অপর মিটারের (নং ১৪৫৯৭২) রিডিং সংযোগের স্থানে নেই। এই মিটারের অক্টোবর ২০১০ থেকে আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ৬২০ টাকা বকেয়া রয়েছে এবং ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন। কিন্তু বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা বকেয়া পরিশোধ করেন নি। গত ৪ অক্টোবর ১০৩৪৯৫০২নং মিটারটি জব্দ করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এই মামলায় দেলোয়ার চেয়ারম্যান ও তার ভাইদের কাছ থেকে মোট ২লাখ ৫৯ হাজার ৯১২ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে সিলেটের বিদ্যুৎ আদালতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নিজের ৭৭ হাজার ২৯২ টাকা ও তার পিতার মিটারের বকেয়া ১লাখ ৮২ হাজার ৬২০টাকা বকেয়া  আদায় না করায় ১৫০৩/২২ নম্বর মামলার প্রধান  আসামী দেলোয়ার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত ১ নভেম্বর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের মোবাইলে বুধবার বিকেলে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি।
তার ভাই আনোয়ার হোসেন মামলার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, টাকা পরিশোধ করে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তিনি কলটি কেটে দেন।
কিন্তু তিনি নিষ্পত্তি হয়েছে বললেও একটি মামলার বাদি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ তারেক জানান, মামলাগুলোর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
বিবাদী টাকা পরিশোধ করে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি আবারও কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আদালত সূত্র।
শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *