সিলেটে ব্যাংক চুরির টাকায় বিলাসিতা

সিলেট

সিলেটে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে চোরাইকৃত টাকা দিয়ে বিলাসিতা করলেন চুরির ঘটনায় জড়িত তিন চোর।চুরির টাকা দিয়ে একজন ক্রয় করেছেন শখের আইফোন। আরেকজন ওই টাকা দিয়ে খেলেছেন অনলাইনে জুয়া। আর বাকি টাকা দিয়ে করলেন বিভিন্ন ধরণের খরচাপাতি। তিনজনের বিলাসিতায় খরচ হয়েছে চুরির ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

রোববার (৫নভেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।

জানা যায়, নগরীর সুবিদবাজারে ডাচবাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে গত ২৭ অক্টোবর দিবাগত রাতে ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা চুরি ঘটনা ঘটে। ৩ নভেম্বর এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে সিসিউরেক্স সিকিউরিটি কোম্পানির এটিএম কর্মকর্তা ২ জনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চুরির ঘটনায় উদ্ধার করা হয়েছে ১৮ লাখ ৬ হাজার টাকা।

এ ঘটনায় গ্রেফতাকৃতরা হলেন- সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার হাতিডহর গ্রামের হোসাইন আহমদের ছেলে আলবাব হোসেন লিমন (২২), মোগলাবাজার থানাধীন নৈখাই পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে আমিনুল হক (২৪), একই থানার নৈখাই মাঝপাড়া গ্রামের সিদ্দেক আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম মুন্না (২৫)।

তাদের মধ্যে লিমনকে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ পয়েন্ট, আমিনুলকে ঢাকার মতিঝিল থানাধীন সাজেদা টাওয়ারস্থ সিকিউরেক্স কোম্পানীর অফিস এবং নুরুলকে ভৈরব থানাধীন উজান ভাটি হোটেলের সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদের মধ্যে আলবাব ও আমিনুল এটিএম বুথে টাকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিকিউরেক্স কোম্পানিতে কর্মরত ও মুন্না আমিনুলের বন্ধু।

গ্রেফতারের পর তিনজনই পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এটিএম বুথে চুরির দায় স্বীকার করেছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৮ লক্ষ ৬ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বাকি ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা আসামিরা বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ও অনলাইন জুয়ার বোর্ডে জমা রেখে দিয়েছে।   এবং ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে করলেন বিলাসিতা।

পুলিশের তথ্যমতে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে নুরুল ইসলাম মুন্না (২৫) চোরাইকৃত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি শখের আইফোন ও নগদ ১০ হাজার টাকা খরচ করেন। আলবাব হোসেন লিমন (২২) নগদ ২০ হাজার টাকা ও আমিনুল হক (২৪) ৬৮ হাজার টাকা দিয়ে অনলাইনে জুয়া এবং খরচ করে।

পুলিশ ও মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ২৭ অক্টোবর ডাচ বাংলা বাংকের নগরীর সুবিদবাজারের এটিএম বুথে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জমা করা হয়। কিন্তু ক্যাশজ্যাম জনিত সমস্যার কারণে তখন টাকা জমা হয়নি। এরপর ৩০ অক্টোবর বুথে গিয়ে ২৬ লাখ ৩২ হাজার টাকার গড়মিল পাওয়া যায়। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ২৮ অক্টোবর রাত ১১টা ৫৫ থেকে ১২টা ১৫ মিনিটের মধ্যে মাথায় কালো ক্যাপ, মুখে মাস্ক ও চোখে পরে ২-৩ জন ব্যক্তি ব্যাংকের বুথের ভোল্ট খুলে টাকা চুরি করে নিয়ে যায়।

শুক্রবার বুথে টাকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিকিউরেক্স প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ প্রতিষ্ঠানটির সিলেট জোনের এটিএম অফিসার সন্দীপন দাস এবিষয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সিকিউরেক্স কোম্পানির দুই কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে সন্দীপন দাস উল্লেখ করেন, অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন বিবাদীর মধ্যে কোম্পানীর এটিএম অফিসার  আলবাব হোসেন ও আমিনুল হক ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ তার।

মামলা করার দিনই লিমন নামের এক আসামীকে শিবগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে লিমন ও আমিনুল সিকিউরেক্স নামের প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা।

এদিকে, গ্রেফতারকৃত আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ১৮ লাখ ৬ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে লিমনের বসতঘর থেকে ১০ লাখ, নুরুলের বর্তমান ঠিকানা সিলেটের দক্ষিণ সুরমর কদমতলী এলাকার স্বর্ণশিখা আবাসিক এলাকার ১০৮ নং বাসা থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার, আমিনুলের বসতঘর থেকে ২১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *