মাঝে কয়েক দিন ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ও দেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টি কমায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। জাগতে শুরু করেছিল দীর্ঘদিন ধরে ডুবে থাকা রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। বিভিন্ন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছিল বানভাসিরা।কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে ভারতের আসাম ও মেঘালয় এবং সিলেট অঞ্চলেফের বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে বৃষ্টির পানিও ঢল হয়ে নামছে সিলেট অঞ্চলের প্রধান নদ-নদী দিয়ে।এতে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেটে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে।এমতাবস্থায় বানভাসি মানুষের মধ্যে ‘ভারতীয় ঢল’ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরীর হাওয়াপাড়া, শাহজালাল উপশহর, তালতলা, জামতলা, তেররতন, ঘাসিটুলা, মির্জাজাঙ্গালসহ আরও কিছু এলাকার বাসবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। ফলে আবারও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের।
আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া বন্যা পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। বুধবার রাতে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে পাহাড়ি ঢল নামলে ও ভারী বৃষ্টি হলে পানি দ্রুত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বন্যা পরিস্থিতিরও আরও অবনতি হবে।
সুনামগঞ্জে ফের বন্যা আতঙ্ক
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ভারতের মেঘালয় ও সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ফলে পানি কিছুটা বাড়ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও এখনো বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে। বুধবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে ৮.৯৪ মিটার উচ্চতায় রয়েছে; তার মানে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ১৫ দিন ধরেই ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৩৬ সেন্টিমিটার।
সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে ৭.৪৪ মিটার থেকে বেড়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৭.৬৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এ পয়েন্টে বিপদসীমা ৭.৮০ মিটার। অর্থাৎ এখানে এখনো বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে পানি। তাছাড়া সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও পুরাতন সুরমা নদীর পানিও গত দুদিন ধরে বাড়ছে বলে পাউবো জানিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ভারী বর্ষণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ। বিভিন্ন এলাকার ভেসে ওঠা রাস্তাঘাট আবারও কিছুটা প্লাবিত হয়েছে।সুনামগঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখনো ২৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪ হাজার বানভাসি মানুষ রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও সিকিমে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আগামী দুই-তিন দিন ওই বৃষ্টি চলতে পারে।ভারতের বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। এর ফলে শুক্রবারের মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে তিস্তা অববাহিকায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হতে পারে।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দুয়েক দিন অবনতি হয়ে তারপর উন্নতি হতে পারে। আর তিস্তা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতি বেশি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় ও দেশের বাকি এলাকার অনেক স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৫৫ মিলিমিটার, সিলেটে ১১০ ও নীলফামারীতে ৯৫ মিলিমিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের অরুণাচলে ১৮৩, চেরাপুঞ্জিতে ৯৩ ও জলপাইগুড়িতে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
শেয়ার করুন