সিলেটে একটি প্রাইভেট ব্যাংক থেকে লন্ডন প্রবাসীর প্রায় ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এতে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে।এছাড়া ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কর্মকর্তা।
সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা দুদকের সিলেটের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন তার প্রতিবেদনে বলেছেন, প্রবাসী আব্দুর রউফ লন্ডনে থাকা অবস্থায় তার স্বাক্ষর জাল করে নতুন চেক বই তুলে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা তুলে নেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এরা হচ্ছেন- তৎকালীন সিলেটের ইসলামপুর শাখার ক্যাশ অফিসার সরফরাজ আলী (পাপলু), একই শাখার সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও ম্যানেজার অপারেশন (বর্তমানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, সাউথবাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, বারুতখানা শাখা) জাবেদ এমদাদ চৌধুরী ও একই শাখার সাবেক অফিসার/কাস্টমার সার্ভিস অফিসার (বর্তমানে ওয়ান ব্যাংকের লাল দিঘীরপাড় শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রউফ সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি বলেছেন, প্রধান আসামি ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখার ক্যাশ অফিসার সরফরাজ আলী ওরফে পাপলু এক সময় তার ঘনিষ্ঠ ছিল। তার কথামতো ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ওয়ান ব্যাংকের ইসলামপুর শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন।
ওই হিসাবে বিভিন্ন সময়ে ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার রেমিট্যান্স পাঠান। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে তার হিসাবের বিবরণী তুলে দেখতে পান হিসাব থেকে তার স্বাক্ষর জাল করে কেউ তার টাকা তুলে নিয়ে গেছে। স্বাক্ষর জাল করে নতুন একটি চেক বইও তোলা হয়েছে। পরে ব্যাংক কর্মকর্তা সরফরাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় সরফরাজ ২৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ও ৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন আব্দুর রউফকে।
বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে নানাভাবে তাকে হয়রানি শুরু করেন সরফরাজ। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দেন। প্রায় দুই বছর তদন্ত শেষে ১৮ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেছেন, টাকা উত্তোলনের ২৩টি চেকের স্বাক্ষর জাল করা সংক্রান্ত সিআইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আব্দুর রউফের হিসাবে জমা টাকা আত্মসাতের জন্য ওয়ান ব্যাংক, ইসলামপুর শাখার ক্যাশ অফিসার সরফরাজ আলী একই শাখার কাস্টমার সার্ভিস অফিসার দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য ও সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও ম্যানেজার অপারেশন জাবেদ এমদাদ চৌধুরীর সহযোগিতায় স্বাক্ষর জাল করে নতুন একটি চেক বই ইস্যু করার জন্য রিকুইজিশন দাখিল করেন।
হিসাবধারীর নামে চেক বই চালু থাকা সত্ত্বেও দিলীপ ভট্টাচার্য ও জাবেদ এমদাদ চৌধুরী ক্যাশ অফিসার সরফরাজের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই না করেই হিসাবধারী আব্দুর রউফের নামে ২৫ পাতার নতুন চেকবই ইস্যু করেন।
সরফরাজ সেই চেক বইয়ের ২৩টি পাতায় আব্দুর রউফের স্বাক্ষর জাল করে স্বাক্ষর শনাক্তকারী ব্যাংক কর্মকর্তা দীলিপ কুমার ভট্টাচার্য ও জাবেদ এমদাদ চৌধুরীর সহযোগিতায় চেকগুলো উপস্থাপন করে সর্বমোট ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা তুলে নেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে এ তিন কর্মকর্তাকে দায়ী করে বলা হয়েছে এরা পারষ্পরিক যোগসাজশে টাকা আত্মসাৎ করছেন।
শেয়ার করুন