সিলেটে সাংবাদিক-পেশাজীবী সমাবেশ

সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, অত্যাচার জুলুম নির্যাতন সহ্য করে আসছি গত ১৪ বছর থেকে। বাঁচার মত বাঁচতে হলে সবকিছু মোকাবেলা করে বাঁচতে হবে। মোকাবেলা না করলে আগামী দিনগুলি বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতনের বিচার, বন্ধ সংবাদ মাধ্যম খুলে দেওয়া ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে সিলেটে সাংবাদিক ও পেশাজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের (এসএমইউজে) উদ্যোগে মঙ্গলবার দুপুরে সুবিদ বাজারস্থ সিলেট প্রেসক্লাবের আমীনূর রশীদ চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র আরিফ বলেন, জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে আগামীর মুক্তির জন্য দেশের মানুষের মুক্তির জন্য, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমাদের রাজপথে থাকতে হবে। এবার জনগণ জেগে উঠেছে। আমরা একটার পর একটা কর্মসূচি দিচ্ছি, জনগণ মাঠে নামছে। এবার আন্দোলনে সকল পেশাজীবীরা, রাজনৈতিক কর্মসূচির সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছে। অতীতে পত্র পত্রিকা দেখেছি সম্পাদকরা কলামে বিষয়ভিত্তিক লেখা লিখতেন। এখন আর কোন এ ধরনের লেখা চোখে পড়ে না। সৎ সাহস নিয়ে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। সিলেটের মতো পণ্যভূমিতে যারা সৎ সাংবাদিকতায় আছেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। মিথ্যুকেরা যদি মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে যেতে পারে, সৎ সাংবাদিকরা সত্য সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে পারবেন না কেন?

সাংবাদিক-পেশাজীবী সবাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি এম. আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের কেন্দ্রীয় মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন ও সহসভাপতি রাশিদুল ইসলাম, সিলেট মহানগরী বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, ইবনে সিনা হাসপাতালের সিলেট এর চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান।

এসএমইউজে’র সভাপতি মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহসভাপতি আবদুল কাদের তাপাদার।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক ডা. শামীমুর রহমান, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, শাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক, শাবি শিক্ষক প্রফেসর ড. আশরাফ উদ্দিন, সিলেট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট মো. আশিক উদ্দিন আশুক।
শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এসএমইউজে’র সিনিয়র সদস্য ও সিলেটের ডাকের প্রধান বার্তা সম্পাদক এনামুল হক জুবের, এসএমইউজের সহসভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর, সহসাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন, সাবেক এসএমইউজের সদস্য মো. তাজ উদ্দিন, কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি শাব্বির আহমদ, দক্ষিণ সুরমা প্রেসক্লাব সভাপতি আশরাফুল ইসলাম ইমরান, জামালগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ প্রমুখ।

প্রধান বক্তা বিএফইউজের সভাপতি এম. আবদুল্লাহ বলেন, ব্যবসায়ীদের একটা সম্মেলন হয়েছে। সেখানে সবাই এক স্টাইলে বলেছে তোমাকেই চাই। একজন বলেছে তোমাকে আমৃত্যু চাই। এসব লুটেরাদের দখলে চলে গেছে এখন মিডিয়া। এসব লোকেরা তাদের দখলে থাকা মিডিয়ায় আমাদের ভালো কথা লিখবে না। দেশের জনগণ প্রকৃতভাবে কি চাচ্ছে সেটা লিখবে না। ফ্যাসিবাদ টিকে থাকুক লুটেরারা সবাই চায়। ফ্যাসিবাদের নেতৃত্বকে ওরা সবাই বলে তোমাকেই চাই। গত ১৫ বছরে সারা দেশে ৫৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। চলতি বছর প্রতি মাসে অনেক সাংবাদিককে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। লুটের টাকা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভাগ করে দিয়ে, ক্ষমতায় টিকে থাকার নীল নকশা তৈরি করা হয়েছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, দেশের মানুষকে স্বাধীন মুক্তভাবে কথা বলতে হলে, এই ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে সকলকে যার যার অবস্থান থেকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তিনি বলেন, সাগর রুনি হত্যার বিচার আজও হয়নি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় মিডিয়াগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

বিশেষ অতিথি নুরুল আমিন রোকন বলেন, দেশে এক গভীর অন্ধকারে বসবাস করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে রাত যত গভীর হয়, ভোরের আলো তত সন্নিকটে। চারিদিকে দমন নিপীড়ন নির্যাতন আর অত্যাচার। এই সরকারের আমলে ৫৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য প্রকাশ করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হচ্ছে। এসব তোয়াক্কা না করে দেশে বহু সাংবাদিক সত্য প্রকাশ করছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে শুরু করে গণমাধ্যমকে কব্জায় নেওয়ার জন্য নতুন নতুন কালা কানুন করতে যাচ্ছে। এসব কালা কানুন বাতিল করতে হবে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা সবসময় ভূমিকা রেখে আসছেন। ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যখনই পেশাজীবীরা মাঠে নেমে এসেছে তখনই আন্দোলন সফল হয়েছে। বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য পেশাজীবীদের প্রতি আহবান জানান।
ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিঃ এর ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার মত। তাদের ধ্বংস করতে পারলেই সবকিছু অন্ধকার। সাংবাদিকরাই একমাত্র দেশ ও জাতির দর্পণ হিসেবে কাজ করতে পারে। যারা খুন গুম করে বা করতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের সকল মানুষই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসী। কাউকে দূরে ঠেলেই আলাদা করা যাবে না। সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তি

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *