স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে কয়েকদিন ধরে দীর্ঘ লাইন ধরে গ্যাস নিতে হচ্ছে যানবাহন চালকদের। সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিকরা বলছেন, লোড না বাড়ানোয় স্টেশনগুলোয় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে জালালাবাদ গ্যাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে তারা মাসিক লোডের ক্ষেত্রে কিছুটা আগ-পিছ করছেন।
গতকাল দুপুরে দিকে নগরের সোবহানীঘাট সুরমা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, গ্যাসোলিন ফিলিং স্টেশন, পাঠানটুলা এলাকার নর্থ-ইস্ট সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে দেখা যায়, ছোট-বড় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। গ্যাস নেয়ার জন্য এতো চাপ, ফিলিং স্টেশনের চত্বর মাড়িয়ে প্রধান সড়কেও অনেক যানবাহন ছিল। এ কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের।
সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট বিভাগের কোষাধ্যক্ষ ও সুরমা অটো কেয়ারের পরিচালক ফয়েজ আহমদ জানান, সিলেট বিভাগে সব মিলিয়ে ৩৬টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। জেলার প্রতিটি পাম্পেই নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক গ্যাস বরাদ্দ দেয় জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি। কিন্তু মাস শেষের আগেই বিশেষ করে তৃতীয় সপ্তাহে অনেক পাম্পে বরাদ্দকৃত গ্যাস শেষ হয়ে যায়। ফলে মাস শেষের আগেই গ্যাস সংকটে পড়ে পাম্পগুলো। ইতোমধ্যে নগরী ও আশপাশের প্রায় চার-পাঁচটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে লোড না থাকায় বন্ধ রয়েছে।
জালালাবাদ গ্যাসের এক কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। যাতে ডেড লক (অচলাবস্থা সৃষ্টি) না হয়, এজন্য তারা লোডের ক্ষেত্রে আগ-পিছ করছেন। লোডের বিষয়টি এভাবেই ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিএনজি স্টেশনগুলোর জন্য গ্যাসের একটি মাসিক বরাদ্দ থাকে। সেই অনুযায়ী স্টেশন কর্তৃপক্ষ গ্যাস বিক্রি করে। এতোদিন কড়াকড়ি না থাকায় কোনো কোনো সিএনজি ফিলিং স্টেশন বরাদ্দ থেকে বেশি গ্যাস বিক্রি করেছে। কিন্তু এখন সরকার গ্যাস সাশ্রয়ের নির্দেশ দেওয়ায় বরাদ্দের বাইরে গ্যাস বিক্রির সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতেও মাসিক বরাদ্দের গ্যাস নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়ে যাওয়ায় সিলেটের বেশ কয়েকটি ফিলিং স্টেশনে চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস। ইতোমধ্যে নগরের শিবগঞ্জ সুরমা অটো কেয়ার, আম্বরখানার আহমদ ফিলিং স্টেশন, আখালিয়া শাহজালাল সিএনজি পাম্প, শহরতলীর ঘোপালের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিলিং স্টেশন সহ সিলেট বিভাগের প্রায় ১০/১২টি ফিলিং স্টেশন বন্ধ রয়েছে।
একসঙ্গে এতোগুলো গ্যাস ফিলিং স্টেশন বন্ধ হওয়ায় অন্যান্য সিএনজি স্টেশনে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে গিয়ে গ্যাস না পেয়ে অনেক গাড়িকে ফিরতেও দেখা গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গাড়ির চালক-যাত্রীরা। চালকরা জানিয়েছেন, চার থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে থেকে ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। এতে যানবাহনের চালকদের কর্মঘণ্টার বড় একটি অংশ নষ্ট হচ্ছে।
লাল মিয়া নামের একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক জানান, ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস কিনেছেন তিনি। দিনের দীর্ঘসময় গ্যাস নিতেই চলে যাচ্ছে। ফলে মালিকের ইনকাম তোলা কষ্ট হচ্ছে।
পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি আমিরুজ্জামান চৌধুরী দৈনিক জালালাবাদকে জানান, ২০০৭ সালে পাম্পগুলোকে সিএনজির যে লোড দেয়া হতো এখনো তা দেয়া হচ্ছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেও বাড়ানো হয়নি গ্যাসের লোড। এ কারণে অধিকাংশ ফিলিং স্টেশনের লোড মাসের ২২/২৩ তারিখে শেষ হয়ে যায়। লোড না থাকায় সিলেটের প্রায় ৭০ ভাগ সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
শেয়ার করুন