সিলেটে সেঞ্চুরীর পথে পেঁয়াজের দাম!

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। আমদানীর খবরে কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকার পর আরেক দফা বাড়লো পেঁয়াজের দাম। শনিবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে ৮৫-৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানীর খবরে গেল সপ্তাহে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমদানী না হওয়ায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল ঈদুল ফিতরের পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। মাত্র এক মাসের মধ্যে দাম বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুণের বেশি। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৮০ টাকার ওপরে। পেঁয়াজের হঠাৎ এ মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে আমদানীর কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। আমদানীর খবরে কয়েকদিন পেঁয়াজের দাম ছিল সামান্য কমতির দিকে। তখন কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে কোথাও কোথাও বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়। তবে আমদানির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না আসায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম, বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়।

শনিবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বন্দর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আব্দুল হাফিজ বলেন, শনিবার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। এখন কিনতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা কেজি। সেজন্য ৯০ টাকার কমে খুচরা বিক্রি করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, সরকার যখন আমদানীর অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছিল, তখন দাম কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু কয়েকদিনে সেটা না হওয়াতে (আমদানি না হওয়ায়) এখন আবার দাম বাড়তে শুরু করেছে।

আম্বরখানা বাজারের বিক্রেতা হাবিব বলেন, ঈদের আগে আমরা ২৮ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতাম। ঈদের পর দফায় দফায় বেড়ে তা ৯০ টাকায় বিক্রি করছি। গত সপ্তাহে দাম কিছুটা কমে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা হয়েছিল। এখন আবার বেড়েছে। নগরীর বাজারগুলোতে দুইদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।

সুবিদ বাজারের ক্রেতা আরিফ আহমদ বলেন, দাম বেশি দেখে আধা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম। যদিও এক কেজি কিনতে চেয়েছিলাম। দাম কমবে কমবে করে কম করে পেঁয়াজ কিনছি, কিন্তু দাম আর কমছে না। মনে হয় ঈদ পর্যন্ত বাড়তি দামেই পেঁয়াজ খেতে হবে।

তিনি বলেন, আমার তো আয় অনুযায়ী কিনতে হবে। প্রতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে। সরকারের উচিত বাজার মনিটর করা। সেটাও মনে হয় হচ্ছে না।
যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করে আসছে, দেশে এখনো পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। চলতি অর্থবছরে পেঁয়াজের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টনে। গত ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বর্তমানে ১৮ লাখ ৩১ হাজার ১৭০ টন পেঁয়াজ মজুত আছে।

মজুত পেঁয়াজের উল্লেখযোগ্য অংশই এখন মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, মধ্যস্বত্বভোগীরাই এখন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। প্রয়োজনে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির কথাও বলছে মন্ত্রণালয়।
হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির কথা বলেছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী। কিছুদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে গত সপ্তাহে শোনা যাচ্ছিল। এমন খবরে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা পেঁয়াজ রপ্তানির সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। এমনকি বাংলাদেশি আমদানিকারকদের মৌখিক আদেশের ভিত্তিতে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক প্রবেশের অপেক্ষায় বাংলাদেশ সীমান্তে অপেক্ষায়ও ছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন পার হলেও এখনো পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি মেলেনি।

আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের পেঁয়াজের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনায় এখন পেঁয়াজের পাইকারি বাজার বেশ চড়া। বর্তমানে পাবনায় প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮০০-৩০০০ টাকায়। সেখানে এই পেঁয়াজ পাইকাররা ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। যা খুচরা বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়।

এ ব্যাপারে নগরীর কালিঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া বলেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এছাড়া পাইকারী বাজারে চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আমদানীর খবরে গেল সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছিল। কিন্তু আমদানী না হওয়ায় গত ৩ দিন ধরে আবার বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। আমদানী না হলে পেঁয়াজের আরো বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *