সিলেট ও মৌলভীবাজারের সড়ক ব্যবহার করতে চায় ভারত

বিশ্ব

বাংলাদেশের সিলেট ও মৌলভীবাজারের সড়ক ব্যবহার করে ভারত ত্রিপুরা ও মণিপুর রাজ্যে জ্বালানি তেল ও তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) পাঠাতে চায়। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হওয়ায় দেশটিকে এ সুবিধা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুই দেশ শিগগির এ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করবে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার করে ভারতকে দুই থেকে আড়াই মাস জ্বালানি পরিবহনের সুবিধা দেওয়া হবে। কী শর্তে ও কত দিনের জন্য ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার করে জ্বালানি পরিবহন করতে পারবে- তা নির্ধারিত থাকবে সমঝোতা স্মারকে।

সূত্রটি জানায়, তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের দিন থেকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপত্কালীন এ সুবিধা দেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এ সিদ্ধান্ত ভারত সরকারকেও জানানো হয়েছে। তবে ভারতীয় হাইকমিশন সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে।

সূত্র মতে জানা গেছে, গত ২২ মে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা চেয়ে অনুরোধ জানায় ভারত। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে। সবশেষ গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এমওইউর খসড়া করে তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মহাসড়ক বিভাগকে দিয়েছে। গত সপ্তাহে সড়ক পরিবহন বিভাগ খসড়াটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের মতামত নেওয়া হয়েছে।

সড়ক পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আখতার বলেন, এমওইউর খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যাবে। তাদের মতামতসহ চূড়ান্ত হবে। এরপর সব কিছু ঠিক থাকলে দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে এমওইউ সই হবে।

এ বছর বন্যা ও ভূমিধসে আসামের সড়ক ও রেলপথ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানী গৌহাটি থেকে রাজ্যটির ডিমাহাসও জেলা ও বরাক উপত্যকা হয়ে জ্বালানি তেল এবং গ্যাস ত্রিপুরা ও মণিপুর পাঠায় দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি)।

একমাত্র রেলপথটি বিধ্বস্ত হওয়ায় গৌহাটি থেকে মেঘালয় ঘুরে ত্রিপুরা, মণিপুর ও মিজোরামে জ্বালানি পাঠাতে হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খরব অনুযায়ী, এতে মাসিক পরিবহন ব্যয় পৌনে ৫ কোটি রুপি থেকে বেড়ে সাড়ে ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। সময়ও লাগছে দ্বিগুণ। দূরত্ব বেড়েছে ১৭৩ কিলোমিটার।

পাহাড়ি বিপদসংকুল পথ এড়াতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা চেয়ে গত ২২ মে ভারত অনুরোধ জানায়। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বন্যা-পরবর্তী সময়ে আসাম থেকে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল পাঠিয়েছিল ভারত। তখন প্রতি টন জ্বালানির জন্য বাংলাদেশকে কিলোমিটারে ১ টাকা ২০ পয়সা টোল দেয় ভারত। এবার ১ টাকা ৮৫ পয়সা টোল প্রস্তাব করেছে সওজ। চট্টগ্রাম, আশুগঞ্জ বন্দর থেকে (ট্রান্সশিপমেন্ট) পণ্য নিয়ে আসাম ও ত্রিপুরায় যাওয়া ট্রাককে একই পরিমাণ টোল দিতে হয়।

ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী, দেশটির মেঘালয়ের ডাউকি থেকে বাংলাদেশের সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢুকবে তেল ও এলপিজিবাহী গাড়ি। সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের শমশেরনগর ও চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে যাবে। জ্বালানি পরিবহন শেষে একই পথে ভারতে ফিরে যাবে।

আসামের বেতকুচি জ্বালানি ডিপো থেকে ত্রিপুরার ধর্মনগর ডিপোর দূরত্ব ৩৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়ছে ১৩৭ কিলোমিটার পথ। ১৫ টন জ্বালানি তেলবাহী ভারতীয় ট্যাংকার এই পথ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা টোল দেবে। খালি অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সময়ও একই পরিমাণ টোল দিতে হবে ভারতীয় গাড়িকে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেছেন, তারা এমওইউর খসড়া তৈরি করে দিয়েছেন। টোল দিয়ে চলবে ভারতীয় ট্যাংকলরি। কতদিন ভারত এই সুবিধা পাবে- সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি সওজের প্রধান প্রকৌশলী।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *