সিলেট ছাত্রলীগ: চার নেতায় মেয়াদ শেষ!

রাজনীতি সিলেট

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিলেট ছাত্রলীগে বিতর্ক আছে, বিলুপ্তিও আছে। কিন্তু সুখবর এসেছে খুব কম সময়। নানা বিতর্ক আর সমালোচনার পর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছিল কেন্দ্র। উভয় শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নেতৃত্ব ঘোষণা করে এই কমিটির মেয়াদ এক বছর বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এ ছাড়াও এক সপ্তাহের মধ্যে আংশিক কমিটি ঘোষণার কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এক সপ্তাহ পেরিয়ে নির্ধারিত মেয়াদ এক বছর শেষ, পূর্ণাঙ্গ কমিটি দূরে থাক, এখন অবধি আংশিক কমিটিই গঠন করা হয়নি! চার নেতায় বন্দি থেকেই মেয়াদ শেষ করেছে কমিটি।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, সিলেটে ছাত্রলীগের এতো দূরবস্থা আগে কখনো দেখা যায়নি। নেতৃত্বের ‘অদূরদর্শীতায়’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সিলেট শাখাকে ‘ধ্বংস’ করা হচ্ছে বলেও অনেকের অভিযোগ।

ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। সেদিন ১০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর আরও ১৩১ জনকে অন্তর্ভূক্ত করে ১৪১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। জেলা ছাত্রলীগের ওই কমিটি ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র। অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ছাত্রলীগ কর্মী ওমর মিয়াদ হত্যাকাণ্ড এবং এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী প্রধান আসামি হওয়াকে কেন্দ্র করে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

২০১৫ সালের ২০ জুলাই সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের চার সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্র। তিন বছরেও এ শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। উল্টো একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচিত হয় মহানগর ছাত্রলীগের ওই কমিটি। অবশেষে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। একইসাথে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

কমিটি বিলুপ্তের পর নতুন কমিটির জন্য জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। তাদের সেই অপেক্ষা ফুরানোর আভাস মিলে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ। সেদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিলেটে এসে কর্মীসভা করেন। তারা শিগগিরই কমিটি গঠন করা হবে বলে ঘোষণা দেন।

এরপর আরও সাত মাস পর, গত বছরের ১২ অক্টোবর সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। জেলা শাখায় নাজমুল ইসলামকে সভাপতি ও রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর শাখায় কিশোয়ার জাহান সৌরভকে সভাপতি ও নাঈম আহমদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এই কমিটি ঘোষণার পর সিলেট ছাত্রলীগে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ঝাড়ু মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কোটি টাকার বিনিময়ে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

ছাত্রলীগের অফিসিয়াল প্যাডের মাধ্যেমে লিখিতভাবে এই কমিটি ঘোষণা করেন সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। প্যাডের মধ্যে ‘এই কমিটির মেয়াদ হবে এক বছর’ এমনটা লিখা ছিল।

এ ছাড়াও কমিটি ঘোষণার দিন (১২ অক্টোবর) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে কমিটি অনুমোদনের সেই অফিসিয়াল প্যাডের ছবি সংযুক্ত করে ক্যাপশনে লিখেন ‘বি.দ্র.: আগামী ৭ দিনের মধ্যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হবে।’

এরপর পেরিয়ে গেছে কতো সাতদিন! যেতে যেতে নির্ধারিত এক বছর মেয়াদই শেষ। আংশিক কমিটিও হয়নি, পূর্ণাঙ্গ কমিটিরও দেখা মেলেনি। সিলেট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এখন হতাশ, ক্ষুব্ধ।

জেলা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের আসলে যাওয়ার জায়গা নাই। পাঁচ বছর হয়ে গেল, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নাই। মধ্যখানে প্রায় চার বছর কোনো কমিটিই ছিল না। এক বছর ধরে দুই সদস্যের পকেট কমিটি আছে, সেটাও কেন আছে, কে জানে! কোনো কর্মকাণ্ড নাই, সাংগঠনিক তৎপরতা নাই, সিলেট ছাত্রলীগে শুধু নাই আর নাই!’

ক্ষোভ ঝরলো মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতার কথায়ও, ‘আমরা কেন্দ্রে এমন নেতৃত্ব পেয়েছি, যারা অযোগ্য, ব্যর্থ। কেন্দ্র যদি ঠিক থাকতো, সঠিক পথে থাকতো, তাহলে সিলেটেও ছাত্রলীগ সঠিক পথে থাকতো, এখানে কমিটি-টমিটি সব থাকতো। অদূরদর্শী নেতৃত্বে সিলেটে ছাত্রলীগ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের অধীনে ১৩টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা এবং ১২টি কলেজ ইউনিট আছে। সেপ্টেম্বর অবধি এই ৩০টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৪টিতে কমিটি গঠন করতে পেরেছে জেলার নেতৃত্ব। ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে কমিটি দেওয়া হয়েছে।

সাংগঠনিক স্থবিরতায় আছে মহানগর ছাত্রলীগ। তাদের অধীনস্থ ২৭টি ওয়ার্ড ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৩টিতে কমিটি করা হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজকে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বারবার কল করেও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *