আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে দল থেকে সিলেট-৪ আসনের প্রার্থীতা এখনও ঘোষণা না করলেও মাঠে নেমেগেছেন সিসিকের সাবেক মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। দলের সিদ্ধান্তে তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করছেন বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তারা প্রায় সবাই শুক্রবার যার যার নির্বাচনি এলাকায় অনানুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন।
সরকারি ছুটির দিন শনিবারও প্রত্যেকে থাকবেন নির্বাচনি এলাকায়। প্রার্থীদের নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ, মসজিদে জুমার নামাজ আদায়, দোয়া কামনাসহ নানা কর্মকাণ্ডে সিলেটে নির্বাচনি ঢেউ লেগেছে। প্রার্থীরা শুধু গণসংযোগই করছেন না, মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় অপর নেতাদের সঙ্গেও শুভেচ্ছবিনিময় করছেন। সবাই মিলে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচালের যে অপচেষ্টা শুরু হয়েছে তা রুখে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির নির্বাচিত হওয়ার পর বুধবার (৫ নভেম্বর) নিজ জন্মভূমি সিলেটে ছুটে যান ডা. শফিকুর রহমান। সিলেটের এক অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সুধী সমাবেশে নেতাকর্মীদের তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে একজন থেকে ২০০ জন এমপি নির্বাচিত হলেও সরকারি সুবিধা গ্রহণ করবে না জামায়াত। জামায়াতের কেউ কোনো ধরনের অপকর্মে জড়াবে না। যারা অপকর্মে যাবেন, তাদের হাত চেপে রাখা হবে। জামায়াত আমির বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার যদি কায়েম করা যায়, তাহলে দুর্নীতির জট কেটে যাবে। কেননা আমাদের স্বার্থের ব্যাপারে সবার আগে বাংলাদেশ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে চলছে প্রচারণা। যেখানেই যাচ্ছি ভোটারদের কাছে থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটারাও অধীর আগ্রহে অপক্ষো করছেন ভোটের দিনের জন্য। আমাদের সবাইকে ভোটারদের মন জয় এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরতে হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “আঙুল বাকা করার ভয় দেখানো হচ্ছে-আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমরা সেই আঙুল ভেঙে দেব। অতীতেও এমন বহু ভয় দেখানো হয়েছিল, কিন্তু বিএনপি কখনও পিছু হটেনি, ভয় পায়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট জেলার ছয়টি আসনসহ বিভাগের ১৯টি আসনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে উপহার দেব।”
জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে, নির্বাচনি মাঠ ততই উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বা আরও প্রায় এক মাস পর। কিন্তু এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়ে গেছে। শুধু বিএনপি নয় অন্য দলগুলোও পিছিয়ে নেই। তারাও ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে হয় প্রার্থী বাছাই করার কাজটি করে ফেলেছে অথবা প্রক্রিয়ায় আছে।
সিলেটের ৬টি আসনসহ ১৯টি আসনে জামায়াতের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জামায়াত নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠন না করলেও বিএনপির মতোই চলমান আন্দোলনে সঙ্গে থাকা দলগুলোকে আসন ছাড় দেবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনি ট্রেন এখন দ্রুতগতিতে ফেব্রুয়ারির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কে কোন আসনে প্রার্থী হলেন, কার কেমন যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা, সেই আলোচনা আর তর্কবিতর্কে সিলেট এখন সরগরম। গ্রামগঞ্জের ছোটবড় চায়ের দোকানে ধূমায়িত চায়ের সঙ্গে নির্বাচনি উত্তাপও ছড়িয়ে পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এসএমপির সম্মেলনকক্ষে মতবিনিময় সভায় সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী বলেছেন, আমাদের যে পরিমাণ ক্ষমতা বা যে সংখ্যক পুলিশ সদস্য রয়েছে, তা দিয়ে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব না। এটা করতে আপনাদের অংশগ্রহণ লাগবে। এ জন্য আমরা চাই আপনাদের দল থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নাম দিন। স্বেচ্ছাসেবীদের আমরা নির্বাচন-সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে ব্রিফিং করব। নির্বাচনী নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ আমরা দেব, যাতে আপনাদের সবার অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে হয়। আমাদের নিরাপত্তা তো থাকবেই।’ তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আপনাদের স্বেচ্ছাসেবীরা যদি থাকে, তহালে আমাদের কাজগুলো সুন্দরভাবে করতে পারব।’
প্রধান সম্পাদকঃ সারওয়ার খান
সম্পাদকঃ জাকের খান (রুবেল)
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫