সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। মিজান নামের এক ব্যক্তি এই অভিযোগ করেছেন। ৮২ বছরের মা খোদেজা বেগমকে নিয়ে সিলেট থেকে লন্ডন আসার সময়ে হুইল চেয়ার নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি।
পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা মিজান জানান, গত ২৭ জুন বাংলাদেশে গিয়ে ২৯ জুলাই তিনি তার বৃদ্ধা মা খোদেজা বেগমকে নিয়ে ফিরে আসেন লন্ডনে। এই ফেরার দিন তিনি এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার শিকার হোন। লন্ডনে টিকেট বুকিংয়ের সময়ই তিনি মায়ের জন্য হুইল চেয়ার সহায়তা লাগবে বলে জানিয়ে রাখেন যা বোর্ডিং পাসে উল্লেখ ছিলো।
বোর্ডিং কাউন্টারে যেতেই বিমানের কর্মকর্তা বলেন, হুইল চেয়ারের জন্য ডাক্তারের সার্টিফিকেট লাগবে। তারপর তিনি পাশেই একজন ডাক্তারকে দেখিয়ে বলেন সেখান থেকে মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে। বাধ্য হয়ে মিজান বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যান।
চেম্বারে বসা ডা. মুশফিকুর রহমান এমবিবিএস বলেন, ‘সার্টিফিকেট নিতে ১ হাজার টাকা লাগবে’! যাত্রী তখন ১ হাজার টাকার বিনিময়ে রশিদ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ডাক্তার মুশফিক বলেন, ‘সার্টিফিকেট পাবেন। রশিদ দেয়া যাবে না’। তখন যাত্রী রশিদ ছাড়া টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ডা. মুশফিক তাদেরকে সার্টিফিকেট না দিয়েই বের করে দেন। যাত্রী আবারো ফিরে যান টিকেট বোর্ডিং কাউন্টারে। সেই কর্মকর্তা বলেন, সার্টিফিকেট ছাড়া ফ্লাইটে উঠতে দেয়া হবে না। তখন নিরুপায় হয়ে যাত্রী মিজান আবারও ফিরে যান ডা. মুশফিকের চেম্বারে। মা প্রায় ১২/১৩ ফুট দূরে বসা। টাকা হাতে নিয়ে মিনিটের মধ্যে সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেলো’।
মিজান আরও জানান, তার মা আসলেই ফ্লাইটে ভ্রমণের উপযুক্ত কিনা সে বিষয়ে কোনো ধরনের পরীক্ষা নীরিক্ষাতো দূরের কথা, এমনকি মায়ের দিকে তাকায়ওনি ডাক্তার। সেই ফ্লাইটে তার মাসহ আরও ৬/৭ জন যাত্রী এসেছিলেন হুইলচেয়ারে। প্রত্যেকেই ১ হাজার করে টাকা দিয়েছেন ডা.মুশফিকের হাতে। বিনিময়ে রশিদ পাননি।
১ হাজার টাকার বিনিময়ে নেয়া সেই মেডিকেল সার্টিফিকেট এই প্রতিবেদকের কাছে আছে। এই ফরমের ওপরেই লেখা একজন ডাক্তার পরীক্ষা করে যাত্রীর কী কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন সেটা লিখে দিবেন। সেই অনুযায়ী ফ্লাইটে উঠা থেকে শুরু করে ফ্লাইট চলাকালীন ও ফ্লাইট থেকে নামা পর্যন্ত সেই যাত্রীর যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন সেটা নিশ্চিত করবে এয়ারলাইন্স।
বাংলাদেশ বিমানের সিলেটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ডা. মুশফিক নিজেই এই নিয়ম চালু করেছেন। বিমান বা সিভিল এভিয়েশনের হুইল চেয়ার বাবদ কোনো চার্জ নেই’।
১ হাজার টাকা দিয়ে হুইল চেয়ারের জন্য সার্টিফিকেট নেয়ার পরও মিজানের হয়রানি শেষ হয়নি। মিজান জানান, ‘তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই দুই টিকেটের জন্য মোট ৮০ কেজি অ্যালাউন্স হিসাব করে বাজার থেকে কেনা স্কেল দিয়ে মেপেই এনেছেন। তার দুই লাগেজের মোট ওজন ছিলো ৮০.৫ কেজি। তারপর বিমানবন্দর আসার পর যাত্রী লাউঞ্জের ভিতরে রাখা সিভিল এভিয়েশনের বড় স্কেলে মেপেও ৮০.৫ কেজি পান। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মাত্র ২০/২৫ ফুট দূরের বোর্ডিং কাউন্টারে একই লাগেজের ওজন তারা দেখাচ্ছিলেন প্রায় ৮৪ কেজি! মানে প্রায় সাড়ে ৩ কেজি বেশি। এজন্য বিমান কর্মকর্তা ১৮০০ টাকা প্রতি কেজি হিসাবে প্রায় ৬ হাজার টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত মিজান ৩ কেজি ওজন কমিয়ে আনতে বাধ্য হোন’।
মিজান বলছিলেন, ‘অনেক যাত্রীর অভিযোগ, বাসায় ও বিমানবন্দরের যাত্রী লাউঞ্জের স্কেলে এক ওজন আর বোর্ডিং কাউন্টারে ৩/৪ কেজি বাড়তি দেখায়’!
মিজানের প্রশ্ন, ‘এটা কি দুর্নীতি, নাকি ওজন স্কেলের ত্রুটি’?
হুইল চেয়ারের জন্য ১ হাজার করে চাঁদা দাবি ও ওজন স্কেলের বিষয়ে জানতে বিমানের সিলেট স্টেশন ম্যানেজার এম এ সাত্তারের নাম্বারে ফোন দিলে ফোন ধরেন এসিস্ট্যান্ট স্টেশন ম্যানেজার মো. জিয়াউল হাসান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘স্টেশন ম্যানেজার একটি ট্রেনিংয়ে ঢাকা আছেন’
প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্কেলের বিষয়টি নিয়ে এর আগেও অভিযোগ উঠেছিলো। আমরা সেটা সিভিল এভিয়েশনকে জানিয়েছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে এখন যেহেতু অভিযোগ উঠেছে এই বিষয়টি আমরা আবারও সিভিল এভিয়েশনকে জানাবো’। তিনি স্কেলের ত্রুটির বিষয়টি নিয়ে ডিরেক্টরের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন ।
‘হুইল চেয়ার বাবদ কোনো টাকা রাখার কথা না’ বলে নিশ্চিত করেন তিনি। মো. জিয়াউল হাসান বলেন, ‘বিমানের একজন ডাক্তার রাখা হয় যাতে ভালনারেবল বা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ফ্লাইটের আগে, ফ্লাইটে ও ফ্লাইট থেকে নামার পর কী কী সহায়তা প্রয়োজন সেই এসেসমেন্ট করার জন্য। টাকা চার্জ যদি করেই থাকেন তাহলে এটা ব্যক্তিগতভাবে করেছেন। বিমানের এমন কোনো চার্জ নেই’! এভাবে টাকা আদায় করা অন্যায় বলেও স্বীকার করেছেন তিনি।
শেয়ার করুন