সিলেট মহানগরীতে দ্রুত ধ্বংস হচ্ছে প্রতিবেশব্যবস্থা

সিলেট

দেশের পাঁচটি বড় নগরে গত ৩০ বছরে প্রতিবেশব্যবস্থা ধ্বংসের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিলেট। সিলেট মহানগরীতে জলাশয় ও বনভূমি কমেছে, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। ফলে ১৯৯১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই নগরীর বাসিন্দারা কয়েক হাজার কোটি টাকার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সম্প্রতি সিলেটসহ ৫টি মহানগরীর উপর করা এক গবেষণায় এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়, কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন এ গবেষণা করেন। চলতি মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ইকোলজিক্যাল ইনফরমেটিকস-এ এই গবেষণা প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় বলা হয়, সিলেটসহ পাঁচটি নগরই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সিলেট গড়ে উঠেছে সুরমা নদীর তীরে। অন্য ৪টি শহরের মতো সিলেটেও দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নদী ও জলাভূমির উপর চাপ পড়েছে।

গবেষণা দলের সদস্য ও অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব নগরে প্রতিবেশব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় ও সবুজ এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃতির এসব উপাদান থেকে আমরা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের জোগান ও স্বাস্থ্যকর আবহাওয়া পেয়ে থাকি। এসব ধ্বংস করে কংক্রিটের ভবন, সড়ক ও নানা অবকাঠামো গড়ে তোলায় আমরা সেবা পাচ্ছি না। এতে শহরগুলোতে দ্রুত তাপমাত্রা বাড়ছে ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।’

গবেষণায় প্রতিবেশব্যবস্থার সেবা বলতে বোঝানো হয়েছে, একটি প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো টিকে থাকলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী বেশ কিছু সেবা পায়। যেমন জলাশয় এলাকার চেয়ে কংক্রিটের এলাকায় ১ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা থাকে। তাপমাত্রা বেশি থাকলে মানুষ বৈদ্যুতিক পাখা, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ নানা কিছু ব্যবহার করে। কোথাও সবুজ গাছপালা থাকলে তাপমাত্রা কমা থেকে শুরু করে ফলমূল, ঔষধিগাছ, পাখি ও প্রাণীদের বসবাসের জায়গা তৈরি হয়। এগুলো প্রতিবেশব্যবস্থার সেবা হিসেবে ধরা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জলাভূমি কমেছে সিলেট শহরে। জলাভূমি কমার ফলে ১৯৯১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিলেটে আর্থিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৫০ থেকে কমে ২০ শতাংশ বাসিন্দা।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শরফরাজ গণি বলেন, ‘কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থে আমাদের শহরগুলোর প্রতিবেশব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।’

গবেষণায় প্রতিবেশব্যবস্থার ১৬ ধরনের সেবার আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিশুদ্ধ বায়ু, বিনোদনের ব্যবস্থা, কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ, পানির ব্যবস্থা, মাটির সুরক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো বিষয় রয়েছে। প্রতিবেশব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ায় এসব সেবার জন্য নগরবাসীকে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।

গবেষণায় প্রতিবেশব্যবস্থা ধ্বংসের আর্থিক ক্ষতি কমাতে পরিকল্পিত নগরায়ণের ওপর জোর দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মোকাবিলায় কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে, সে ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্যথায় চূড়ান্ত ধ্বংসের হাত থেকে এসব শহরের প্রতিবেশব্যবস্থাকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে গবেষণায় বলা হয়।

সূত্র : প্রথম আলো

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *