প্রায় দেড় দশক পর সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনে জেলা-মহানগর উভয় শাখায় কাউন্সিলরদের ভোটে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে চার নেতা নির্বাচিত হন। এরপর অপেক্ষা শুধু দীর্ঘতরই হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর হয়নি। পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের হতাশাকে বাড়িয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে জেলা-মহানগর যুবলীগের কমিটির তিন বছরের মেয়াদ!
দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে তাঁদের প্রায় দুই বছর সময় চলে যায়। এরপর তাঁরা কমিটি তৈরি করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সিলেট জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয়। পরের বছর সম্মেলন হয় মহানগর যুবলীগের। তবে ওই দুই সম্মেলনে কমিটি হয়েছিল সমঝোতার ভিত্তিতে, কাউন্সিলরদের ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। প্রায় ২৭ বছর আগে, ১৯৯২ সালে সিলেট যুবলীগে নেতৃত্ব নির্বাচনে সম্মেলন করে কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। এর পর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শীর্ষ দুই পদে ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়।
যুবলীগ নেতারা জানান, যুবলীগের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিতিতে ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই সিলেট মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপদি পদে ৩৬৬ ভোট পেয়ে নেতৃত্ব পান আলম খান মুক্তি। এ পদে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন; শেষপর্যন্ত ৩ জনই সরে দাঁড়িয়েছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদে মুশফিক জায়গীরদার ৩৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ পদে আরো দুই প্রার্থী ছিলেন। অন্যদিকে, জেলা যুবলীগের সম্মেলন হয় ওই বছরের ২৯ জুলাই। এ সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। সম্মেলনে সভাপতি পদে শামীম আহমদ (ভিপি শামীম) ১১৫ ভোট এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শামীম আহমদ (সীমান্তিক শামীম) ১০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন।
সম্মেলনে জেলা ও মহানগর যুবলীগের শীর্ষ চার পদে আসা নেতাদের তিনজনই আগে থেকেই নেতৃত্বে ছিলেন। মহানগর শাখায় মুক্তি ছিলেন পুরনো কমিটির আহবায়ক, মুশফিক ছিলেন যুগ্ম আহবায়ক। অন্যদিকে জেলা শাখায় পুরনো কমিটির সভাপতি ছিলেন শামীম (ভিপি)। এবার সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন এসেছেন শামীম (সীমান্তিক)। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহসিন কামরান সর্বশেষ সম্মেলনে কোনো পদে প্রার্থী হননি।
যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মতে, ওই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া সিলেট যুবলীগের প্রাণের সঞ্চাল ঘটেছিল। বিশেষ করে পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা শুরু করেছিলেন ব্যাপক তোড়জোড়। কিন্তু তাদের আগ্রহ-উচ্ছ¡াস মিইয়ে যেতে বেশিদিন লাগেনি। দায়িত্বশীল নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ‘হচ্ছে’ ‘হয়ে যাবে’ ‘প্রস্তুত হচ্ছে’ ‘কাজ চলছে’ বলে সময়ক্ষেপণই করেছেন শুধু। কিন্তু তিন বছরেও তাঁরা পারেননি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যুবলীগের একেকটি ইউনিটের কমিটির মেয়াদ থাকে তিন বছর। এ হিসেবে সিলেট যুবলীগের কমিটির মেয়াদও শেষ।
এদিকে, নির্দিষ্ট মেয়াদে দীর্ঘ তিন বছর সময় পেয়েও ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে। পদপ্রত্যাশীদের অনেকেই এখন ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, সামনের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবিলম্বে সিলেট যুবলীগকে পুনর্গঠন জরুরি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা যুবলীগে সহসভাপতি পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘তিন বছরে যদি একটা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা না যায়, তাহলে তাঁরা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) কেন দায়িত্বে আছেন, এই প্রশ্ন না তুলে উপায় নেই। স্পষ্টত, তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।’
মহানগর যুবলীগে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, ‘সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন কেবলই হতাশা, ক্ষোভ। সামনে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন। এজন্য কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে দ্রুততার সাথে সিলেট যুবলীগকে পুনর্গঠন করে কর্মঠ, পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব গঠন করতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, ‘আমরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি। সঠিকভাবে সংগঠনকে চালিয়ে নিচ্ছি। আমাদের মেয়াদের প্রায় দুই বছর করোনা ছিল। এরপর প্রায় ছয় থেকে আট মাস আগে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এখনও অনুমোদন পাওয়া যায়নি।’
কমিটির বিষয়ে কথা বলতে সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদকে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
শেয়ার করুন