সিলেট যুবলীগ: বহু প্রতিক্ষিত কমিটি নিয়েও ক্ষোভ-অসন্তোষ

সিলেট

২০১৯ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে ভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিল, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু এরপর পেরিয়ে গেছে ৪ বছর। দুই বছর মেয়াদী এই কমিটিও ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ন হয়ে পড়েছে।

এরমধ্যে শনিবার সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে দীর্ঘপ্রতিক্ষিত এই কমিটি নিয়েও অসন্তোষ বিরাজ করছে। পদবঞ্চিতদের মধ্যে এই কমিটি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একে পকেট কমিটি আখ্যা দিয়েছেন তারা। কমিটিতে অন্য দল থেকে আসা অনপ্রবেশকারীদের পদায়ন করা হয়েছে কিন্তু দলের দুঃসময়ের কর্মীদের মুল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়ন না করা এবং জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘনের অভিযোগে পদপাওয়া অনেকে পদত্যাগের চিন্তা করছেন বলেও জানা গেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকে যাছাই বাছাই করে এই কমিটি নিয়েছেন। যাছাই-বাছাইয়ের জন্য দীর্ঘ সময় নিয়েছেন তারা। ফলে এই কমিটি নিয়ে তেমন কোন অসন্তোষ নেই। ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীদেরই মূল্যায়ন করা হয়েছে।

আর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বলেন, কিছু অসন্তোষ থাকতে পারে। তবে তা বড় কিছু নয়। আমরা সব বলয়ের সমন্বয়েই কমিটি গঠন করেছি।

কাউন্সিলের মাধ্যমে চার বছর আগে জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামীম আহমদ। আর নগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও মুশফিক জায়গীরদার পান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। এতোদিন সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের রাজনীতি ছিলো এই চার নেতানির্ভর। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় এতোদিন তৃণমূলে ক্ষোভের সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা দেয় স্থবিরতা।

যুবলীগের নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সিলেটে যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে আলম খান মুক্তিকে আহ্বায়ক করে সিলেট মহানগর যুবলীগের ৬১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মেয়াদ ছিল ৩ মাস। তবে সেই কমিটি প্রায় ৬ বছর দায়িত্ব পালন করে। এরপর সম্মেলনের মাধ্যমে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

একইভাবে সিলেট জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছিল ২০০৩ সালে। ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত কার্যক্রম চালায় যুবলীগের সেই কমিটি।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। তবে কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা।

কমিটিতে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা কয়েজনকে পদায়ন করার অভিযোগ ওঠেছে।

যুবলীগের কমিটি ঘোষণার পরদিনই রোববার সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার ফেসবুকে লিখেন, ‘আমাদের সংগঠনে কি কর্মীর এতই অভাব যে অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে কমিটি করতে হবে! দায়িত্বশীলদের রুচির দূর্ভিক্ষ চলছে।’

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন সম্পাদক মিঠু তালুকদারকে মহানগর যুবলীগের সদস্য পদে রাখা হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে মিঠু বলেন, ঘোষিত কমিটিতে আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজেদের আস্তাভাজন লোকদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা যুবলীগ চেয়ারম্যানের কাছে বিচারপ্রার্থী হবো।

একই অভিযোগ করেন মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটির উপ শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম রিপনও। এরআগে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

রিপন বলেন, ছাত্রলীগের যারা আমার নিচে ছিলেন এমনকি আমার ওয়ার্ড পর্যায়ের অনেক কর্মীকেও যুবলীগের কমিটিতে আমার উপরে পদায়ন করা হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের আস্থাভাজনদের দিয়ে এ কমিটি করেছেন।

সর্বশেষ সম্মেলনে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী একজনকে নতুন কমিটিতে রাখাই হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এটি পকেট কমিটি হয়েছে। যারা সবসময় রাজপথে থাকে, দলের দুঃসময়ে দল ছেড়ে যায়নি তাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদি, অনুপ্রবেশকারী অনেককে কমিটিতে পদায়ন করা হয়ছে। এতে সিলেটে যুবলীগকে আরো দুর্বল করা হলো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *