সিলেট শহরে কোমরসমান পানি, আতঙ্কে মানুষ

সিলেট

কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সিলেটে আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে, সিলেট শহরে দুইদিনের ব্যবধানে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় শহরের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে ঘর ছেড়ে পরিচিতজন কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

বুধবার সকাল থেকে দুপুরে পর্যন্ত সিলেট শহরের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপশহর, যতরপুর, তালতলা, জামতলা, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ এলাকাসহ নিচু এলাকার অনেক বাসিন্দা ঘর ছেড়ে পরিচিতজন কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রের উদ্দেশে যাচ্ছেন। অনেকে ঘরে কয়েক স্তরে ইট ফেলে সেখানে খাট তুলে কোনোরকমে আছেন।

এদিকে, বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলোতে মানুষজন চলাচল করছে না। তবে অফিসগামী মানুষেরা পানি মাড়িয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। নগরের শামীমাবাদ, ঘাসিটুলা, বেতেরবাজার, তোপখানা, কাজিরবাজার, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, জামতলা, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, কামালগড়, মাছিমপুর, চালিবন্দর, কাষ্টঘর, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, যতরপুর, তেরোরতন ও উপশহর এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি। অনেক বাসা, দোকানপাট পানিতে তলিয়ে আছে।

অপরদিকে, রোজভিউ হোটেলের সামনে দিয়ে উপশহরমুখী সড়কের কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আবার কোমরপানি। জমে থাকা পানিতে ভাসছে বারোয়ারি ময়লা-আবর্জনা। এ পানি মাড়িয়েই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচল করছেন। পানিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল করছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র আরো জানায়, জেলায় ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় পানিবন্দি লোকদের উদ্ধারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলোতে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ১২ পর্যন্ত ২৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সকাল ৯টায় ১৩ দশমিক ৬৬ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল যা বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। তবে দুপুর ১২টায় এই পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। সুরমা নদী সিলেট পয়েন্টেও সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সেটি দুপুর ১২টায় ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধির পরিমাণ অব্যাহত রয়েছে। এই পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাটে সারিগোয়াইন নদীর পানি কিছুটা কমলেও বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *