সিলেট সিটি নির্বাচনঃফাঁকা মাঠেও অস্বস্তি আ.লীগে

সিলেট

২০১৩ সাল থেকে সিলেটের নগর ভবন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। নির্বাচনের পরপরই দলের ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল’কে কামরানের পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এবার বিএনপিবিহীন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীও সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই ফাঁকা মাঠেও অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সূত্র বলেছে, ২১ জুনের নির্বাচন ঘিরে এই অস্বস্তির পেছনেও দলীয় কোন্দল। এ নিয়েই শঙ্কা তাঁদের। কারণ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশী স্থানীয় নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ হন। তবে সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ প্রার্থীর বিরোধিতা করছেন না। বরং শুরু থেকেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

কিন্তু ভোটের দিন তাঁরা ক্ষোভের প্রকাশ ঘটান কি না, এ নিয়েই চিন্তা নেতা-কর্মীদের। কারণ, আগের দুই নির্বাচনেও সবাই মাঠে ছিলেন। কিন্তু ক্ষোভ বোঝা যায় কামরানের পরাজয়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার পরও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দিনরাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বড় দল, আমরা অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছি। নেত্রী একজনকে (আনোয়ারুজ্জামান) মনোনয়ন দিয়েছেন। তাঁর পক্ষে দিনরাত প্রচার চালাচ্ছি। কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সুযোগ নেই।’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনও জানালেন, দলের সব নেতা-কর্মী ভোটের মাঠে কাজ করছেন। কোনো বিভেদ না থাকার কথা বললেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি দল সিলেটে আছে। দলীয় সূত্র বলেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ে কথা বলছেন। তাঁরা সতর্ক করে বলছেন, দলের প্রার্থীর পরাজয় হলে ‘ছদ্মবেশী বাহিনী’কে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ বা মনোমালিন্য নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও সতর্কতামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রকাশ্যে কিছু দেখছি না।’

এদিকে দল থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিলেও কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন বিএনপির ৪২ জন ও জামায়াতে ইসলামীর ২৩ জন। কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা কেন্দ্রে গেলে মেয়র পদে তাঁরা কাকে ভোট দেবেন, এটি আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেমন প্রচার না থাকা মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের আশা, এসব ভোট তিনিই পাবেন।

তবে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘আমরা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের আত্মীয়স্বজন হিসেবে কিছু নেতা-কর্মী সহযোগিতা করছেন, এটা সত্য।’

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। ২১ তারিখ বিপুল ভোটে নৌকার বিজয়ের মাধ্যমে এর প্রমাণ মিলবে। তিনি আরও বলেন, ‘কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকেই হালকা করে দেখছি না, সবাই গুরুত্বপূর্ণ। এটা মাথায় রেখেই আমরা প্রচার চালাচ্ছি।’

মেয়র পদের অন্য প্রার্থীরা হলেন জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র মো. আবদুল হানিফ কুটু, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মো. শাহ্ জামান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *