সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন কে?

সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসন। এই আসন নিয়ে দেশে একটা মিথ প্রচলিত আছে, এখানে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে, তারাই গঠন করে সরকার। গত ছয়বারের নির্বাচনে হয়েছে তাই। যে কারণে এই আসনে জনপ্রিয় ও স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী দিতে চায় দুই দল। আওয়ামী লীগে সম্প্রতি কিছু মন্তব্যে বেকায়দায় পড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনই স্বচ্ছ প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে।

এই আসনে এমপি ছিলেন সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবাদপুরুষ প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, সততা ও সরলতার মূর্ত প্রতীক প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিএনপির জনপ্রিয় নেতা এম সাইফুর রহমান। আদর্শিক রাজনীতির ধারক এসব নেতা সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে তারা স্থান করে নিয়েছেন জনতার হৃদয়ে।

এমন বাঘা বাঘা জনপ্রিয় নেতাদের এই আসনে উত্তরসূরি এ এম এ মুহিতের ছোট ভাই এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মোমেন সহজ-সরল জীবনযাপনের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সরলতার পরিচয় দিয়েছেন। তার অকপটে কথা বলায় দলের অনেকেই বিব্রত হয়েছেন। যে কারণে অনেকেরই ধারণা, সামনে তাকে মনোনয়ন না-ও দেওয়া হতে পারে। অবশ্য, এ নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার মনোভাব স্পষ্ট নয়।

রাজনৈতিক সচেতনরা বলছেন, দলীয় সভাপতি তার সারল্যে নাখোশ না হলে তিনিই হবেন এই আসনে ফের আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী। তাকে না দিলে এই আসনে কে হচ্ছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী? এ অংক মেলানো বেশি জটিল। কারণ এখানে প্রার্থী আছে অনেক, কিন্তু সবার জনপ্রিয়তা নেই। বড় দুই দলে এবং দলের বাইরেও এটি ভাবনার বিষয়।

সিলেটের জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মনোনয়ন না দিলে মোটামুটি ইমেজধারী প্রার্থী সংকটে পড়বে আওয়ামী লীগ। তবে নেতৃত্ব শূন্যতা কাটাতে এখানে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে আনতে পারে আওয়ামী লীগ। বিএনপি থেকে আসা এই নেতার সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের একটা সুসম্পর্ক আছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও কিছু ভোট টানতে পারবেন তিনি। অথবা ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলে অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং ভবিষ্যৎ সৃদৃঢ় করতে সুলতান মনুসরকেও এ আসনে আনা হতে পারে।

এদিকে, অনেকে ধারণা করছেন সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী কমাতে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকেও নিয়ে আসা হতে পারে সিলেট-১ এ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলও হতে পারেন এ আসনের প্রার্থী। তার বাসাও এই এলাকায়। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমেদকেও দেওয়া হতে পারে সিলেট-১ এ আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা।

তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমেদ বলেন, নেত্রী আমাকে দুই বছর হলো মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি তো জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলাম। আর নির্বাচনে আমার আগ্রহ সিলেট-৫ এ। সেখানে আমি স্বাধীনতার আগ থেকেই কাজ করছি। সবশেষ উপজেলা চেয়ারম্যানও ছিলাম। শহরে (সিলেট-১) আমার আগ্রহ নেই। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে একচুলও নড়ি না, নড়বোও না। তিনি যেটা সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটা তো অবশ্যই মানবো।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আমার শহরের বাড়ি পড়ছে সিলেট-১ এ। আর গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমায় (সিলেট-৩)। রাজনৈতিকভাবে আমি দুই জায়গায়ই সক্রিয়। এর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করবো। যেখান থেকে সিগন্যাল পাই, সেখান থেকেই মনোনয়ন চাইবো।

এসময় সিলেট-১ আসনে দলীয় অবস্থান কেমন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সিলেট-১ এ যিনি এমপি আছেন, উনি তো এলাকায় কম যান, কাজ কম করছেন। এটাই সমস্যা। এমনিতে আমাদের দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো আছে।

সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মিল্লাত আহমদ চৌধুরী বলেন, শুনছি মনোনয়নে প্রার্থী পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমরা পরিবর্তনের পক্ষে না। কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভালোই চালাচ্ছেন। এলাকার মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। ভালো সার্ভিস দিচ্ছেন। কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওনার কো-অপারেশন কম, সম্পর্কে ঘাটতি আছে, এটাই ওনার নেতিবাচক দিক। নেত্রীর তো পরিষ্কার কথা, ‘আমি আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থী করবো, যারা দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে এবং জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’ সামনে কী হবে! সংসদ নির্বাচন কাছাকাছি এলে সবই স্পষ্ট হবে। এখন বোঝা যাচ্ছে না।

বিএনপির চমক হতে পারেন জাইমা রহমান
আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও এমন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে। স্পষ্টত, অনুমান করা যায় না, কে সক্রিয় বা কাকে দেওয়া হতে পারে মনোনয়ন। সিলেট-১ আসনটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি বলে পরিচিত। এই এলাকার মেয়ে হিসেবে তারেকপত্নী জোবায়দা রহমানকে এই আসনে প্রার্থী করতে পারে বিএনপি। তবে জোবায়দার দুদকের মামলা জটিলতার বিবেচনায় মেয়ে জাইমা রহমানকেও স্বচ্ছ ও বিজয়ী প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন দলটির অনেক নেতা।

সিলেট সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা এবং সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২২৯ নম্বর আসন সিলেট-১। এখানে মোট ভোটার ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৭ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৬৩।

ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, যখন যে দল সরকার গঠন করেছে এই আসনে সেই দলের প্রার্থী জয়ী হয়েছে। দলের জোয়ার ও সরকার গঠনের সম্ভাব্যতা অনুমান করেই ভোট দেন এখানকার ভোটাররা। নানা সময়ে হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও ভোটের হিসাব-নিকাশে সরকার গঠনকারী দলেরই জয় হয়েছে।

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ কে আবদুল মোমেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্দুল মুক্তাদির পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৫১ ভোট।

১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬৩৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এম সাইফুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে পান ১ লাখ ৪০ হাজার ৩৬৭ ভোট।

৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) বিএনপির এম সাইফুর রহমান পান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আবুল মাল আব্দুল মুহিত পান ৯৫ হাজার ৮৯ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ৫৯ হাজার ৭১০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এম সাইফুর রহমান ধানের শীষ প্রতীকে ৫৮ হাজার ৯৯০ ভোট পান।

৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) বিএনপির খন্দকার আবদুল মালিক ধানের শীষ প্রতীকে ৩৭ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ইফতেখার হোসেন শামীম নৌকা প্রতীকে ৩৫ হাজার ৪৭০ ভোট পান।সূত্র: জাগোনিউজ

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *