সিলেট-৩ : কায়িক প্রস্থান হলেও তিনি ‘জীবিত’

সিলেট

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী (দুলাল)। এর বাইরে কিছুটা আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান।

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত প্রার্থীরা। দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ- এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। জীবনাবসান ঘটলেও এই সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন আসনটির সাবেক এমপি মরহুম মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী।

তিনি টানা তিনবার সিলেট-৩-এ নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সুবাদে তিনি ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন এই আসনে। বদলে দিয়েছেন সামগ্রিক জরাজীর্ণ অবস্থা। দৃশ্যমান উন্নয়ন ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করার অনন্য দক্ষতায় জয় করেছেন আপামর মানুষ মন। যে কারণে তার মৃত্যুর দুই বছর পরও তিনি নির্বাচন মাঠে ভোট ফ্যাক্ট হয়ে দাড়িয়েছেন। তিনি ২০২১ সালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর এই আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান। তখন ছন্দহীন হয়ে পড়েন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী অনেক নেতাকর্মী। সামাদের নেতাকর্মীরা মূল্যায়ন না পাওয়া ও অবহেলার অভিযোগ তুলে অনেকটাই নীরব হয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আবারো উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলয়ের নেতাকর্মীরা। তারা বর্তমান সাংসদ হাবিবুর রহমানের সাথে না গিয়ে প্রকাশ্যেই কাজ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালের জন্য। দিনরাত ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা। ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও পদধারী নেতারা কাজ করছেন ডা. দুলালের ট্রাক মার্কার জন্য।

অন্যদিকে নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় মাহমুদ উস সামাদের নাম নিচ্ছেন অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিরাও। মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যুর সময় পাশে থাকা ও
সামাদ পরিবারের সাথে সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করছেন বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান। সম্প্রতি ফেঞ্চুগঞ্জে নৌকা মার্কার এক সভায় নাম বলেছেন  জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজও।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাহমুদ উস সামাদের অবহেলিত নেতাকর্মী ও সামাদ পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. দুলাল।

এ ছাড়াও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করে যাওয়া ব্যাপক উন্নয়ন কাজ মানুষ মনে রেখেছে। সাধারণ মানুষও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ছায়া খোজছে। সেক্ষেত্রে ভোটের হিসাব অনেকটাই নির্ভর করছে মরহুম মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী নামের উপর। পর্যবেক্ষণ বলছে মাহমুদ উস সামাদ নামের আবেগ যিনি আয়ত্ত করতে পারবেন সাধারণ মানুষ তার ভোট বাক্সে নজর দিবে।

জানা যায়, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এই আসনে ১০হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। বদলে দিয়েছেন এই আসনের যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্কুল কলেজ মসজিদ মাদ্রাসা হাসপাতাল সহ অন্যান্য দৃশ্যমান উন্নয়নে।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় দক্ষিণ সুরমা কলেজ ও রেবতীরমণ উচ্চ বিদ্যালয় সরকারিকরণ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ, দক্ষিণ সুরমায় বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসসহ অনেক সরকারি অফিস স্থাপন, শেখ রাসেল টেক্সটাইল কলেজ ও সিলেট টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপন, প্রায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি, ২০টি বেসরকারি স্কুলকে সরকারিকরণ, বহুল আলোচিত সিলেট-সুলতানপুর সড়ক সংস্কার নির্মাণ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ ও ৫০ শায্যায় উন্নীতকরণ, জালালপুর কলেজ,  দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ, নুরজাহান মেমোরিয়াল মহিলা কলেজ এবং অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ভবননির্মাণ।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী নির্মাণ, ফেঞ্চুগঞ্জ কলেজ ও কাসিম আলী স্কুলকে সরকারীকরণ,ফেঞ্চুগঞ্জ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ,শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মান,হাকালুকি হাওর জিরো পয়েন্টকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, উপজেলার অনেকগুলো  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, উপজেলাজুড়ে অসংখ্য রাস্তা নির্মাণ, ফেরিঘাট- থানা রোড হয়ে মাইজগাঁও-কলের রোড হয়ে পালবাড়ি সার্কুলার রোড নির্মাণ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং উপজেলায় অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।

বালাগঞ্জ উপজেলায় তিনি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন। বিশেষ করে উপজেলাটিতে নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ করা। যেমন আজিজপুর সড়ক, বালাগঞ্জ কলেজ ও ডিএন স্কুল সরকারিকরণ, ,বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অত্যাধুনিক সাত তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

এছাড়া বালাগঞ্জ কুশিয়ারা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংসদে সীদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন।  সার্ভে সমাপ্ত করে কাজ শুরু করে যেতে পারেননি।

বালাগঞ্জ নদী বন্দরের জন্য গ্যাজেট প্রকাশ করা হয়েছিল সেটি বন্ধ রয়েছে, বালাগঞ্জ উপজেলা ভবন নির্মাণের জন্য কাজ করে গেছেন সেটির কাজ শুরু হচ্ছে,বালাগঞ্জ উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে, বালাগঞ্জ উপজেলাকে একটি উন্নয়নের মডেল এলাকায় রুপান্তর করার জন্য এবং পিছিয়ে পড়া এলাকাকে তিনি  উন্নয়নের জন্য অনেক পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এবং অনেকটি বাস্তবায়ন করছেন।

এসব দৃশ্যমান কাজের জন্য ও জনগণের মতের মূল্য দেওয়ার কারণে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মৃত্যুর পরও আছেন ভোটের হিসাবে। আগামী ৭ জানুয়ারির তাই ভোটে ফ্যাক্টর হবে মাহমুদ উস সামাদের ছায়া। শেষ পর্যন্ত হাবিব বা দুলাল যে-ই টানতে পারবেন মাহমুদ উস সামাদ অনুসারীদের ভোট, বিজয় তাঁরই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *