
সিলেটের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ধুম্রজাল এখনও কাটেনি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দাবি, তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে আরিফের এমন দাবি মানতে নারাজ অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকেও এখন সিলেট-৪ আসনের প্রার্থীর ব্যাপারে কোন ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এ কারণে অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দাবি, এ আসনে কাউকেই এখনও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ফলে তারাও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতে করে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এই অঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। ভোটের মাঠে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বিএনপির কর্মীরা।
তবে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বিএনপির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, শীঘ্রই এই আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবেন কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর সকলেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, সিলেট বিএনপিতে কোন বিভক্তি নেই। ধানের শীষের পক্ষে সবাই এক।
সিলেট-৪ আসনেবিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতা হেলাল উদ্দিন এবং সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।
আর দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। এই আসনের মনোনয়ন পেতে গণসংযোগে মাঠে নেমেছিলেন।
সিলেট-১ আসন না পেলে পুণরায় সিলেট সিটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন সাবেক এই মেয়র।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তবে ফাঁকা রাখা হয় ৬৩ টি আসন। দলটি, যার মধ্যে সিলেট-৪ আসন ছিল।
এর দুদিন পর ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে আরিফুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাসায় তলব করে তাকে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার বাসায় ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতিতে আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয় বলেও জানান তিনি।
তবে আরিফুল হককে ‘স্বঘোষিত’ প্রার্থি দাবি করে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বিশেষত আবদুল হাকিম চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন ও সামসুজ্জামান জামান প্রতিদিনই এই এলাকায় মিছিল-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। হাকিম ও হেলালের সমর্থনে এলাকায় মশাল মিছিলও হচ্ছে। তাদের সমর্থকরা আরিফকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে ‘স্থানীয়’ কাউকে প্রার্থী করার দাবি তুলেছেন। এতে করে এই আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আরিফুল হক এবং আবদুল হাকিম চৌধুরী, হেলাল উদ্দিনের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও মশাল মিছিল দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে বলছেন অনেকে। তৃণমূলের দাবি, দল থেকে যাকে চূড়ান্তভাবে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হবে, তার পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।
এ ব্যাপারে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনের ভোটাররা এখানকার স্থানীয় কাউকে প্রার্থী হিসেবে চান। তারা মনে করেন বাইরের কেউ প্রার্থী হলে এই এলাকার উন্নয়ন হবে না। তাই তারা আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
আর আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ পেয়েই আমি সিলেট-৪ আসনে প্রচারণা শুরু করেছি।
দলে কোন বিরোধ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণার অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও আমার পক্ষে মাঠে নামবেন।
বিএনপির এই মনোনয়ন যুদ্ধে অনেকটা নিরুত্তাপ অবস্থানে রয়েছে তাদের জোটের শরিকরা। এই আসনে জামায়াত ইসলামির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আহমদ।
শেয়ার করুন


