গেল বন্যার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে ফের সুনামগঞ্জে চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা। ফলে জনমনে চরম আতংক বিরাজ করছে। জেলা জুড়েই বলাবলি হচ্ছে আবার ও নাকি বন্যা হবে । অবশ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে বৃদ্ধি পেয়েছে নদ নদীর পানি ।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার নীচু এলাকা আবার ও নুতন করে প্লাবিত হয়েছে।গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ১৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরা পুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৯৩ মিলিমিটার এর আগের দিন ২০০ মিলিমিটার। এই কর্মকর্তা জানান আবহাওয়ার পূর্বাভাস কোন বন্যার আভাস দেয়নি লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্তবর্তী খাসিমারা ও চেলা নদী ও পানি বেড়ে গিয়ে পানি প্রবেশ করছে নিম্নাঞ্চলে।
ছাড়ার সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি গত ২৪ ঘন্টায় বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। তবে বিপদসীমা অতিক্রম করেনি, এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
বোগলা ইউনিয়নের আন্ধারীগাঁও এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, আগের বন্যার পানি ঘর থেকে নামতে পারেনি এর মধ্যে রাত থেকে ঢল নামছে। চেলার নদীর ইদুকোন ও আলমখালি দিয়ে পানি ঢুকছে। এখানে বন্যায় আগেই বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। আমাদের এলাকায় আবার পানি বাড়ছে, এখন আবার বড় বন্যা হলে আমাদের মত মানুষ কি করে বাচমু?
গত ১৬ জুন থেকে সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বাড়িঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। সুনামগঞ্জ টানা চার দিন সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সময়কালে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ছিল বন্ধ। এরপর ২০ জুন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামছে। তবে এখনো অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আছে। এখনো জেলার ৫ উপজেলার মানুষ পানিবন্দী আছে। এসব উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে আছে বন্যার পানি। জেলার গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে প্লাবিত আছে। তবে নতুন করে পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে জেলাবাসীর মনে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.জহুরুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও পরিস্থিতি আগের মতো হবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হবে। তবে ভারী নয়, এই বৃষ্টি হবে হালকা। বন্যা পূর্ভাবাস অনুযায়ী সুনামগঞ্জে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা এখনো বন্যাকবলিত। মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি আছে। কিন্তু ভারতের মেঘলায়েও বৃষ্টিপাত হওয়ায় দোয়ারাবাজারের সীমান্তবর্তী খাসিমারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল এলাকায় প্রবেশ করেছে। উপজেলার ১৪ টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ বন্যাদুর্গতদের মাঝে খাবার বিতরনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ছাতক উপজেলার নির্বহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান মামুন জানান ছাতক উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই এখনও পানি রয়েছে এছাড়াও আরও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আমাদের বন্যা মোকাবেলার সব প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ সহ অন্যান্য সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রচুর সহযোগিতার খবর পাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা কবলিত দূর্গম হাওরাঞ্চলের মানুষ সহ অন্যান্য জায়গাতে দিনে রাতে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আরও বিভিন্ন সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে।
শেয়ার করুন