সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলন সামনে। এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখে সুনামগঞ্জে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছিলো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে জেলার উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের শাখাগুলোর সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত করার লক্ষ্য ছিলো এসব ইউনিটের হবে আগামী দিনের নতুন নেতৃত্ব। সোমবার (১৪ নভেম্বর) দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস লাশচাপা পড়লো এক পর্যায়ে। মিছিল-স্লোগান পরিণত হলো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায়।
সোমবার দুপুরে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থলে দলের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত দুপক্ষের ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে ঢিলের আঘাতে আহত হয়ে আজমল হোসেন চৌধুরী ওরফে আরমান (৩৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি দিরাই শহরের হাসপাতাল রোডের আবদুল হান্নান চৌধুরীর ছেলে। তাঁদের গ্রামের বাড়ি দিরাইয়ের কুলঞ্জ ইউনিয়নের কুলঞ্জ গ্রামে।
পুলিশ, দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন ঘিরে দুই দিন আগে থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। উপজেলা সদরের বিএডিসি মাঠে সোমবার দুপুরে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এছাড়া মঞ্চে দলের আরও দুজন কেন্দ্রীয় নেতা, জেলার তিনজন সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বসেছিলেন।
দুপুর দেড়টার সময় সম্মেলনস্থলের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া এবং উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসতে থাকে। মিছিলটি সমাবেশমঞ্চের কাছাকাছি আসামাত্র দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এ সময় দুই পক্ষের নেতাকর্মীরাই ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। অতিথিরা তখন মঞ্চেই ছিলেন। তাদের কারও উপর ঢিল ও চেয়ার গিয়ে পড়ে। সংঘর্ষকালে দুপক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করার পর আবার সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।
এদিকে, নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের দাবি- সমাবেশস্থলে সংঘর্ষ চলাকালে আজমল হোসেন চৌধুরীর পিঠে ঢিলের আঘাত লাগে। এরপর তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে মানুষের ভিড়ে চিকিৎসা নিতে পারেননি। বাসায় আসার পর অসুস্থবোধ শুরু হলে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তাঁকে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া দাবি করেছেন, নিহত আজমল হোসেন চৌধুরী তাঁর কর্মী। সংঘর্ষের সময় মোশাররফের সামনেই প্রতিপক্ষের ইটের আঘাতে আহত হন আজমল। পরে হাসপাতালে যাওয়ার পথে আজমলের মৃত্যু হয়।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বলেন- ‘আমরা তদন্ত করে দেখবো- আজমল হোসেন নামের ওই ব্যক্তি ঢিলের আঘাতেই মারা গেছেন কি না। যদি এমনটি ঘটে এবং তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায় তবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।তিনি বলেছেন, ‘আজকের (সোমবার) সম্মেলনে যারা বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের আওয়ামী লীগে জায়গা হবে না। শিগগির তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
উপজেলা বিএডিসি মাঠে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর সোমবার বিকালে সম্মেলন মঞ্চে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শেয়ার করুন