আসন্ন হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সংসদ সদস্যের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩৪৭৮৭) দিয়ে নিজের প্রচারণায় নেমেছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলেয়া আক্তার।
তিনি গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বানিয়াচং সদরের ৪নং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে সাক্ষাত করতে যান। পরবর্তীতে তিনি ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদে যান সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সাথে সাক্ষাত করতে।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আলেয়া আক্তার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ) সংসদীয় আসনে টানা ৪ বারের সংসদ সদস্য আলহাজ অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের সহধর্মিণী।
আলেয়া আক্তার পর্যায়ক্রমে উপজেলা সদরের সবকটি ইউনিয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের গাড়ি নিয়ে নিজের প্রচারণায় অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এমপি আবু জাহিরের ব্যক্তিগত সহকারী সুদীপ দাস, বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জাহেনারা আক্তার বিউটি প্রমুখ।
এদিকে শুধু বানিয়াচং উপজেলাতেই নয় জেলার সবকটি উপজেলাতেই প্রার্থী আলেয়া আক্তার সরকারের এই গাড়ি নিয়ে প্রচারণায় অংশ নেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই বিষয়ে জানতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আলেয়া আক্তারের ব্যবহৃত (০১৭৪৮-৩৫**৮৬) মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে নাম্বার ব্যস্ত থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিস্তারিত জানতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার (জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শূন্যপদে নির্বাচন-২৪) মোহাম্মদ সাইদুর রহমান জানান, কে বা কোন প্রার্থী সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে প্রচারণা চালাচ্ছেন সেটা আমি বলতে পারব না। তবে বিষয়টি নিয়ে লিখিত আকারে আমাকে জানালে ব্যবস্থা নিতে পারব। এরপর ব্যস্ততা দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে মোবাইলের লাইন কেটে দেন।
পরবর্তীতে ফোন ঘুরিয়ে কারো বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে লিখিত দিতে বলেন মোহাম্মদ সাইদুর রহমান।
উল্লেখ্য, আগামী ৯ মার্চ (শনিবার) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আলেয়া আক্তার ছাড়াও আরও ৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, মো. ফরিদ উদ্দিন তালুকদার ও মো. নুরুল হক।
ইতিমধ্যে প্রার্থীদেরকে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আলেয়া আক্তার পেয়েছেন আনারস প্রতীক, অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী ঘোড়া প্রতীক, মো. ফরিদ উদ্দিন মোটরসাইকেল আর মো. নূরুল হক পেয়েছেন চশমা প্রতীক। শুক্রবার তাদের মধ্যে এই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
হবিগঞ্জের ৯ উপজেলা, ৫ পৌরসভা ও ৭৮ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ১শ ৪ জন।
প্রসঙ্গত, বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলীয় টিকেট পাওয়ার পর ২৮ নভেম্বর তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সামছুল হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ-১ নির্বাচনী আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ফলে সংসদ নির্বাচনে আর অংশ নেয়া হয়নি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীর। তার ছেড়ে দেয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
শেয়ার করুন