স্থিরতা যেন কমছেইনা নিত্যপণ্যের বাজারে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস চরমে। সরকার কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম ঠিক করে দিলেও বাজারে নেই তার কোনো প্রভাব।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার মনিটরিংয়ের অভাব, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটসহ নানাবিধ কারণে বাজারে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে পণ্যের দাম কী পরিমাণে বাড়া উচিত এবং কী পরিমাণে বেড়েছে, এ খবর রাখতে কোনো সংস্থাকেই মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে যে যার মতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। এতে সব শ্রেণির ক্রেতারা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
এ অবস্থায় শুক্রবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে অপরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাজারের সিন্ডিকেট যদি দেখতে পারতাম, ধরতে পারতাম, তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সিন্ডিকেট ধরা যায় না, অধরা থেকে যায়। তবে এটা সাময়িকভাবে বাজারের ভেতরেই থাকতে পারে। সিন্ডিকেট হয়, সিন্ডিকেট ভাঙে, নতুন সিন্ডিকেট হয়।শুক্রবার ছিলো সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এদিন অন্যান্য দিনের তুলনায় বাজার এমনিতেই গরম থাকে। নগরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা বেঁধে দিলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকায়। হালিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা।খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে গিয়ে চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না ডিম। তাদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে আড়ৎ থেকেই বাড়ানো হচ্ছে দাম।
বেশ কিছুদিন ধরে একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে আলু-পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না দামে। স্বস্তি নেই কাঁচাবাজারেও। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্য কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ, আলু ও ডিম- এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রতি কেজি আলুর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে দাম হবে ২৬ থেকে ২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য হবে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দাম হবে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং খুচরা দাম হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস ডিমের উৎপাদন পর্যায়ে দাম হবে সাড়ে ১০ টাকা এবং খুচরা দাম হবে ১২ টাকা।
এদিকে, সবজীর বাজার আরো অস্থির ।শুক্রবার ছুটির দিনে এসে প্রায় প্রতিটি সবজির কেজি হয়েছে ৮০-১০০ টাকা। এতে করে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে সবজির দাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন, টমেটো ও গাজর। প্রায় প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে।
বাজারে দেখা যায়, জাত ভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকা। যেখানে দুদিন আগেও বেগুনের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে বেগুনের দাম।চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর ও টমেটো। প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। টমেটো কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০-১২০ টাকা।
আবার বরবটি, করলা, কাকরোল, কচুর লতি, ঝিঙে ও পটলের দাম। এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজিতে। হালিপ্রতি কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা কদিন আগেও ছিল ৪০ টাকা।
মাঝে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে ৩০০ টাকা কেজি হলেও, গতকালের বাজারে মরিচ বিক্রি হয় ২০০-২২০ টাকা কেজিতে। কাঁচা মরিচের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের শাক প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়, যা কদিন আগেও ছিল ১০-১২ টাকা।বাজারে আসা ক্রেতা মানিক বলেন, মাংস কেনা বাদ দিয়েছি দামের জন্য। মাছ কেনাও বাদ। এখন সবজির বাজারের এই দশা। মানুষের স্বস্তির একটা জায়গা অন্তত থাকা উচিত। ছুটির দিনে বাজার করতে এসে সবজির দাম শুনে অবাক হয়ে গেলাম।
এদিকে, বাজারে মাছের দামও নাগালের বাইরে। সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনে পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ। বাজারে এসব মাছের কেজিও এখন ২২০ থেকে ২৮০ টাকা। এছাড়া রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়। যা কয়েক সপ্তাহ আগে তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি বলে জানিয়েছেন মাছ বিক্রেতারা।
শেয়ার করুন