হকারমুক্ত ফুটপাতের অপেক্ষা, আজ থেকে ত্রিমুখী অ্যাকশন

সিলেট

স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট নগরীর রাস্তা ও ফুটপাত হকার মুক্ত করতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে ত্রিমুখী অ্যাকশন। হকার পুনর্বাসনের জন্য উতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে লালদিঘীরপাড়স্থ অস্থায়ী মার্কেট। হকারদের নির্ধারিত স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

এর আগে আজ থেকে নগরীর রাস্তা-ঘাট ও ফুটপাতে কোন হকার বসতে দেয়া হবেনা বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী। পৃথক আদেশে তারা হুশিয়ারী দিয়ে বলেছেন রোববারের পর থেকে কেউ রাস্তা কিংবা ফুটপাতে বসলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে হকার ব্যবসা সিলেট নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা। বার বার উদ্যোগ নিলেও দীর্ঘমেয়াদী সফলতা মিলেনি। রাস্তা ও ফুটপাত হকারমুক্ত করতে ৪র্থ বারের মতো শুরু হচ্ছে হকার পুনর্বাসন কার্যক্রম।

হকার পুনর্বাসনে অতীতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের একক উদ্যোগ থাকলেও এবার এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত রয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী। সিসিক, ডিসি ও এসএমপির ত্রিমূখী উদ্যোগের ফলে এর দীর্ঘ মেয়াদী সুফলের প্রত্যাশায় নগরের মানুষ।

এদিকে পুরনো ঠিকানায় হকারদের ফেরাতে লালদিঘীরপারস্থ অস্থায়ী হকার মার্কেট পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ করা হলেও কাউকে নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে দেয়া হয়নি। রাস্তায় যেভাবে হকাররা বসেন। সেভাবেই তারা মিলেমিলে বসে ব্যবসা করবেন বলে সিসিকের সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই নগরীর ফুটপাত ও সড়ক হকারদের দখলে। এতে নগর জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সীমাহিন ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। অতীতে একাধিক বার হকার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসিতও করা হয়েছে। কিন্তু কোনটাই বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। ফের সড়ক ও ফুটপাতে ফিরে এসেছেন হকাররা।

তবে এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন। লালদিঘীরপাড়ে অস্থায়ী মার্কেটে হকারদের ফেরানোর প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পুর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এবার হকাররা তাদের ঠিকানায় না ফিরলে কঠোর অ্যাকশনে নামবে প্রশাসন। সড়ক ও ফুটপাতে কোন হকার বসলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়েছে সিটি করপোরেশন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালে তৎকালীন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম লালদিঘীরপাড়ের মাঠে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। ফুটপাত ছেড়ে নতুন ঠিকানায় ব্যবসা স্থানান্তর করেন কয়েকশ’ হকার। কিন্তু আলো স্বল্পতা ও ড্রেনেজ সমস্যার কারণে হকাররা বেশিদিন সেখানে থাকতে চাননি। এরপর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই মাঠে ফের হকারদের পুনর্বাসন করা হয়।

কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের বিশৃঙ্খল পরিবেশের সুযোগ নিয়ে লালদিঘীরপাড় মাঠ ছেড়ে হকাররা ফের চলে আসেন সড়কে। এক বছরেরও বেশী সময় পর হকার ফেরাতে নেয়া হলো ত্রিমূখী উদ্যোগ।

এদিকে, শনিবার (১৮ আক্টোবর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এক আদেশে জানানো হয়, নগরীর বন্দর, জিন্দাবাজার, লামাবাজার, তালতলা, আম্বরখানা ও চৌহাট্টা এলাকায় রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে কোনো ধরনের হকার বা অস্থায়ী দোকানপাট বসানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

আদেশে বলা হয়েছে, জনসাধারণের নির্বিঘœ চলাচল ও নগরীর শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করে উল্লিখিত এলাকায় হকারি কার্যক্রম পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলা হয়েছে, নগরীর সৌন্দর্য ও চলাচলের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, লালদিঘীরপাড়ে অস্থায়ী হাকার মার্কেট প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ থেকে তারা সেখানে ব্যবসা করবেন। এখানে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার হকারকে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মাঠটিতে ক্রেতা টানতে বেসরকারী উদ্যোগে কেউ বিনোদনের জন্য কোন স্থাপনার উদ্যোগ নিলে সিসিকের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। কাউকে কোন স্থান নির্ধারিত করে দেয়া হবেনা। আমাদের পক্ষ থেকে পণ্যের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পণ্য নিয়ে নির্দিষ্ট গলিতে বসতে হবে।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, আগের উদ্যোগে অবকাঠামো ও পরিবেশের সমস্যার পাশাপাশি কিছু ত্রæটি ছিল। এবার আমরা সেই ত্রæটি সারিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। বিদ্যুৎ, পানি, নিরাপত্তা ও শৌচাগারের ব্যবস্থা হয়েছে। পরিবেশের দোহাই দিয়ে ফুটপাতে নামার সুযোগ থাকবেনা।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। ক্রেতারা যদি হকার মার্কেটে যান তাহলে হকারদের ব্যবসা ভালো হবে। তারা সেখানে নিরাপদে ব্যবসা করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। পুনর্বাসনের পর যদি কোনো হকার রাস্তায় বসেন তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে লালদিঘীরপাড় মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার থেকে তাদেরকে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে। এরপর যদি কোন হকার সড়কে বা ফুটপাতে বসেন তবে তাদেও বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *