হবিগঞ্জে এক বছরে পানিতে ডুবে ৪০ শিশুর প্রাণহানি

হবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত পানিতে ডুবে ৪০ শিশুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে আটটি জোড়া মৃত্যুর ঘটনা। সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ উপজেলার মান্দারকান্দি গ্রামে শেলি বেগম নামে এক শিশু পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়।

এসব মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট বইতে হয়েছে হাওর অধ্যুষিত বানিয়াচং উপজেলাকে। এ উপজেলায় চলতি বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ৯ শিশু। এই তালিকায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় শিশুমৃত্যুর ঘটনা মাত্র একটি।

এ ছাড়া আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় চার, নবীগঞ্জে চার, বাহুবলে আট, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় তিন, মাধবপুর উপজেলায় আট ও চুনারুঘাট উপজেলায় তিন শিশু মারা গেছে পানিতে ডুবে।

স্থানীয় ও পুলিশের সূত্রের তথ্যমতে, গত ১ অক্টোবর বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায় সিজিল মিয়ার মেয়ে নাহিদা আক্তার (৬)। ৩ অক্টোবর একইভাবে মারা যায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের যশকেশরি গ্রামের মার্জিয়া আক্তার নামে দুই বছরের এক শিশুকন্যা। ২১ অক্টোবর মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের আরিছপুর গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় মো. ইব্রাহীম (২) নামে এক শিশুর। ২৫ অক্টোবর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামে মিঠু মিয়ার ১৩ মাস বয়সী শিশুপুত্র ওয়াসিম মিয়া মারা যায়। একই দিন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল ঢালি হাটিতে পরিবারের সঙ্গে নানাবাড়িতে বেড়াতে আসা শিশু মোস্তাফিজুর রহমান মমিনের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। ২৭ অক্টোবর বানিয়াচংয়ের কামালখানি গ্রামে মারা যায় ১৮ মাসের শিশু তাসিবা আক্তার জান্নাত। এ ছাড়া ২৯ অক্টোবর নবীগঞ্জ উপজেলার পানি উমদা ইউনিয়নের বড়চর গ্রামে উসমান মিয়া নামে দুই বছরের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।

১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর উপজেলায় পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় ছাতিয়াইন ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম (৪) ও ইটাখোলা গ্রামের নিলিমা দেবনাথ (২) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায় ইকবাল হোসেন ও রাফি আহমেদ নামে দুই শিশু। ২২ সেপ্টেম্বর মাধবপুর উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের বরগ গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় ইয়ামিন নামে চার বছরের এক শিশু। ২৭ সেপ্টেম্বর বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৪ নম্বর দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় মুবিন (৬)।

২ আগস্ট বাহুবল উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা যায় ছয় বছরের শিশু তোহা। একই দিন একই উপজেলায় দেড় বছর বয়সী দিতি প্রিয়া নামে আরেক শিশুর মৃত্যু হয়। ৯ আগস্ট আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের আটপাড়া এলাকায় পানিতে ডুবে মারা যায় তাহমিদুল নামে দুই বছরের এক শিশু। ১০ আগস্ট বানিয়াচং উপজেলার নোয়াপাথারিয়া গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় তাজউদ্দিন রোহান (৭)। ১৫ আগস্ট চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাঁওয়ে মারা যায় রুয়েল আহমেদ চৌধুরী নামে এক প্রতিবন্ধী শিশু। ২০ আগস্ট বাহুবল উপজেলার বড়ইউড়ি গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় ওই গ্রামের আউয়াল খানের চার বছরের শিশুকন্যা তাহিরা আক্তার।

৫ জুলাই চুনারুঘাট উপজেলার মহিমাউলা গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় রিহান নামে পাঁচ বছরের শিশু। মাধবপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামে পুকুর থেকে শাপলা তুলতে গিয়ে মারা যায় ঝিলিক নামে ১১ বছরের এক শিশুকন্যা। ৭ জুলাই বাহুবলের নন্দনপুর গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে মারা যায় শিশুকন্যা রাইসা আক্তার। ১০ জুলাই সদর উপজেলার ধল গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় রিহাদ মিয়া নামে ছয় বছরের এক শিশু। ১৩ জুলাই বাহুবল উপজেলার ডুবাঐ গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় দেড় বছরের শিশু ওসমান গণি। ১৬ জুলাই বানিয়াচংয়ের উত্তর সাঙ্গর গ্রামে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় ফাতেমা আক্তার ও মাহমুদা খাতুন নামে দুই চাচাতো বোনের। ১৭ জুলাই মাধবপুর উপজেলার ধলগাঁও গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় দুই শিশু। তারা হলো– ওই গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে আরিফ মিয়া ও নজির মিয়ার ছেলে কারিনা আক্তার। ২৫ জুলাই বানিয়াচংয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় আমিনা বেগম নামে চার বছরের এক শিশুকন্যা।

৩ জুন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল গ্রামে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় মিরাজ মিয়া নামে এক শিশু। ৭ জুন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় দেড় বছরের শিশু নুবা আক্তারের। ৮ মে বানিয়াচং উপজেলার জাতুকুর্ণপাড়ায় পানিতে ডুবে মারা যায় কুলসুমা আক্তার নামে এক শিশু। ২৬ মে চুনারুঘাট উপজেলার চাটপাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় তাসমিয়া চৌধুরী লামিয়া। একই দিনে বাহুবলে সাব্বির আহমদ নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। ১ এপ্রিল বাহুবল উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় ইয়াছিন মিয়া (৪)। একই দিন একই গ্রামে দেড় বছর বয়সী জান্নাত আক্তারের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। ২২ ফেব্রুয়ারি মাধবপুর উপজেলার আদাঐর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় শিশু আরাফ।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন নুরুল হক জানান, পানি নিয়ে খেলার একটি সহজাত প্রবৃত্তি শিশুদের মাঝে রয়েছে। সেজন্যই তাদের নিয়ে এ ব্যাপারে সচেতনতা দরকার পরিবারের। এসব শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো, পারিবারিক অসচেতনতা। শিশুদের প্রতি বিশেষ বয়সে সঠিকভাবে খেয়াল না রাখলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হতে পারে। তাই এ বিষয়ে বাবা-মাসহ পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অত্যন্ত সচেতন থাকা জরুরি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *