হবিগঞ্জ শহরে বেড়েই চলেছে ‘ড্যান্ডি’ আসক্তির পথশিশুর সংখ্যা। দিন দিন এসব পথশিশুদের সংখ্যা বাড়ায় একদিকে যেমন রাস্তা-ঘাটে সাধারণ মানুষের বিব্রতকর অবস্থা বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা। এমতাবস্থায় দ্রুত এসব পথশিশুদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। যদিও হবিগঞ্জ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে পথশিশুর দল। সুযোগ পেলেই তারা সেবন করছে মরণনেশা ‘ড্যান্ডি’। বিশেষ করে আদালতপাড়া, কোর্ট মসজিদ এলাকা, দূর্জয় হবিগঞ্জ প্রাঙ্গন, হাসপাতাল এলাকা, টাউন হল রোড, বেবী স্ট্যান্ড এলাকা, বৃন্দাবন কলেজ ক্যাম্পাস এলাকায় তাদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। ওইসব এলাকায় পথশিশুরা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ালেও ‘ড্যান্ডি’ সেবনের সময় তারা একত্রিত হয়ে যায়। ৬ থেকে ৭ জনে ভাগ হয়ে হয়ে তারা ‘ড্যান্ডি’ সেবন করে থাকে। ‘ড্যান্ডি’ সেবন করা এসব পথশিশু আবার টাকার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি, টোকাইবৃত্তির পাশাপাশি বাসা-বাড়িতে চুরিও করে থাকে। অনেক সময় আবার দেখা যায় তারা স্কুল কলেজের সামনে টাকা না দিলে শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ সাধারণ মানুষদের উত্যক্ত করে
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন জানান, রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো এসব পথশিশুদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। অন্যথায় এদের সংস্পর্শে এসে অন্য কিশোর কিশোরীরাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ‘ড্যান্ডি’ আসক্তি। হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. দেবাশীষ দাশ জানান, ‘ড্যান্ডি’র প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুসফুস, লিভার, কিডনিসহ মানব দেহের নানা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এতে দেখা দিতে পারে ঝিমুনি, ক্ষুধামন্দা, শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গ। দীর্ঘদিন অতিমাত্রায় ড্যান্ডি সেবনে অকালমৃত্যুও ঘটতে পারে।
কথা হয় (চৈতি আক্তার ছদ্মনাম) কিশোরীর সাথে। সে জানায়, তারা টাকার জন্য সবসময় ভাত কিনে খেতে পারে না। তাই যে কিছু টাকা ভিক্ষা করে পায় তাই দিয়ে ‘ড্যান্ডি’ কিনে তা সেবন করে। ‘ড্যান্ডি’ সেবন করলে তারা নেশার ঘুরে অনেক সময় কাটাতে পারে। সে আরো জানায়, ‘ড্যান্ডি’ কিনতে তাদের মাত্র খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা। তা দিয়ে তারা সকলে মিলে ‘ড্যান্ডি’ সেবন করতে পারে। শুধু চৈতি নয়, তার মতো আরো এরকম অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন শিশুর একই অবস্থা। এদের প্রায় সকলেই ‘ড্যান্ডি’ আসক্ত। গত দুই তিন বছর আগেও দেখা মিলত গুটিকয়েক পথশিশুর।
সমাজসেবা অধিদপ্তর হবিগঞ্জের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন জানান, পথশিশুদের পুনর্বাসনে কাজ করছে অধিদপ্তর। ‘ড্যান্ডি’ আসক্ত শিশুদের ব্যাপারেও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় ৯ জনের একটি তালিকা তৈরী করা হয়েছে। তবে ইতোপুর্বে তাদের কোন তালিকা ছিল না। তিনি আরো বলেন, জেলাজুড়ে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও বেসরকারি সংস্থাসহ সমাজ সচেতন বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সম্বন্নিত উদ্যোগের ফলেই কেবল এ সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব।
শেয়ার করুন