হবিগঞ্জে ১৮ দিনে ১১ খুন

হবিগঞ্জ

হবিগনজ জেলা প্রতিনিধিঃ

হঠাৎ করেই যেন চরম অবনতি ঘটেছে হবিগঞ্জ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। গত ১৮ দিনে দুইটি জোড়া খুনের ঘটনাসহ প্রতিক্ষের হাতে খুন হয়েছেন ১১ জন। এছাড়াও ঘটেছে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা। আহত হয়ে এখনও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন কয়েকজন। মাত্র ১৮ দিনে ১১টি খুনের ঘটনায় জেলাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এরই মধ্যে গ্রাম্য এসব দাঙ্গা থামাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে জেলার বানিয়াচং, লাখাই, হবিগঞ্জ সদর উপজেলাসহ বেশ কিছু এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে সহস্রাধিক দেশীয় অস্ত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, মাধবপুর ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি দাঙ্গা প্রবণ এলাকা। এসব এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে জড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষে। তবে এর মধ্যে জমি-জমা, ধান কাটা, গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার ও পুর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করেই বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, এসব দাঙ্গা প্রতিরোধে সাধারণ মানুষদের আরো সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে হবে জনপ্রতিনিধিদের। এছাড়াও জনসচেতনতা তৈরীতে কাজ করতে হবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে। বাড়াতে হবে সাধারণ মানুষদের সাথে সৈহার্দপূর্ণ সম্পর্ক।

জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল ইফতারের পুর্বে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বানিয়াচং উপজেলার কুশিয়ারতলা গ্রামের লোকজন। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় জাহাঙ্গীর মিয়া নামে এক ব্যক্তি। পরে আহত অবস্থায় মারা যান ইছাক মিয়া নামে আরো এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় আহত হন আরো অন্তত ৩৫ জন। পরদিন ৯ এপ্রিল কৃষি জমিতে গরু দিয়ে ধান খাওয়ানো কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয় আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নোয়াগড় গ্রামে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী কলেজ মেডিকেলেজ হাসপাতালে ১০ এপ্রিল মারা যায় ফয়েজ মিয়া (২০) নামে এক যুবক। ১৩ এপ্রিল জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে আবারো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বানিয়াচং উপজেলার মশাকলি গ্রামের দুটি পক্ষ। ভয়াবহ এ সংঘর্ষেও প্রাণ যায় দুই জনের। তারা হলেন, মশাকলি গ্রামের যশের দাশের ছেলে সুব্রত দাস ও সুনীল দাশের ছেলে সুজিত দাস। এ ঘটনার পর থেকেই গ্রেফতার এড়াতে পুরুষশূণ্য হয়ে পড়ে গ্রামটি।

১৪ এপ্রিল একই উপজেলার কুর্শা খাগাউড়া গ্রামে ভাতিজার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ যায় মোশারফ হোসেন নামে এক চাচার। যদিও এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিহত মোশারফ ওই গ্রামের মোশাহিদ মিয়ার ছেলে। একই দিনে লাখাই উপজেলার মকসুদ পুর গ্রামে ধান কাটা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষে মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে আব্দুল জলিল নামে এক বৃদ্ধ কৃষক নিহত হন। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। এছাড়াও নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বদরদি গ্রামে একটি সংঘর্ষের ঘটনায় আহত বাচ্ছু মিয়ার মৃত্যু হয়। গত ১৪ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশ। ২২ এপ্রিল সকালে ঈদের দিন মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে উচ্চস্বরে গান বাজানো নিয়ে ইরফান আলী নামে এক বৃদ্ধকে হামলা চালিয়ে খুন করে একদল যুবক। ২৪ এপ্রিল একই উপজেলার বহরা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে ছেলের মার্বেল খেলা নিয়ে বিরোধে খুন হন মিনারা খাতুন নামে এক নারী। সে ওই গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী। সবশেষ ২৬ এপ্রিল বুধবার সকালে পুর্ব বিরোধের জেরধরে সংঘর্ষ হয় লাখাই উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামে। দু’পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হয় জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি আহত হয় আরো অন্তত ৫০ জন। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত জহিরুল ইসলাম ওই গ্রামের আবু সিদ্দিক এর পুত্র।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিলেট মেট্রাপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, হাওর এলাকায় ছোটখাটো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। এর পেছনে স্থানীয় গ্রাম্য আধিপত্য, জনপ্রতিনিধিদের ইন্ধন ছাড়াও জমি জমা সংক্রান্ত বিষয় থাকে। বড় গোষ্টির লোকজন ছোট গোষ্টির লোকদের উপর নির্যাতন করে। গ্রাম্য শালিস ব্যবস্থায়ও রয়েছে ক্রুটি। এ ব্যাপারে লোকজনকে সচেতনের পাশাপাশি গ্রাম্য দাঙ্গার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
দাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত

পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা বলেন, প্রতি বছরই রমজান ও ঈদ আসলেই দাঙ্গার ঘটনাটি বেড়ে যায়। তবে দাঙ্গা হাঙ্গামা নিয়ন্ত্রনে রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ। গ্রামে গ্রামে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করার পাশাপাশি দাঙ্গা বিরোধী প্রচারণাও অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য বিট পুলিশিং কাজ করছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *