হাঁস পাখি শিকার করে ‘ভাগবোটায়ারা’র ঘটনা তদন্তে প্রমাণিত, বনপ্রহরী প্রত্যাহার

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের বড়লেখার হাকালুকি হাওরে বিষটোপ দিয়ে হাঁস পাখি শিকার করে ভাগবাটোয়ারার ঘটনা তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (মৌলভীবাজার) সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র বুধবার বিকেলে সিলেটটুডেকে বলেন, ‘হাকালুকি হাওরে পাখি শিকার করে ভাগবাটোয়ারার ঘটনাটি তদন্তে প্রাথমিকভাবে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেনের সংশ্লিষ্টতাও মিলেছে। শীঘ্রই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো।’

এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী বুধবার বিকেলে সিলেটটুডেকে বলেন, ‘হাকালুকি হাওরে পাখি শিকারের ঘটনাটি তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই ঘটনায় হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া পাখি শিকারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে হাকালুকি হাওরে পাখি শিকারের ঘটনাটি তদন্তে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

গত ১৫ জানুয়ারি ‘হাকালুকিতে শিকার করা অর্ধশতাধিক হাঁস পাখি বন প্রহরীর উপস্থিতিতে ‘ভাগবাটোয়ারা’ ’ শিরোনামে সিলেটটুডেতে সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি তদন্তে এই কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর হোসাইনকে।

কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উবায়েদ উল্লাহ খান ও উপসহকারি প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) মঈন উদ্দিন।

গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বুধবার বিকেলে বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের একটি বিল থেকে তালিমপুর ইউপির মুর্শীবাদকুরা গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে মো. হুসেন আহমদ বিষটোপ দিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক হাঁস পাখি শিকার করেন। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে তিনি পাখিগুলো বস্তায় ভরে স্থানীয় কাননগোবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন পাখিসহ হুসেনকে আটক করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে নিয়ে যান। পরে তাদের সামনে ‘ভবিষ্যতে এধরনের গর্হিত কাজ করবেন না’ মর্মে হুসেন মুচলেকা প্রদান করেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, শিকারিকে ছেড়ে দেওয়ার পর প্রায় অর্ধশতাধিক হাঁস পাখি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ‘ভাগবাটোয়ারা’ করে নেন। আর শিকারি হুসেনের কাছ থেকে লিখিত মুচলেকায় মাত্র তিনটি পাখির কথা উল্লেখ করা হয়। মূলত শিকারিকে বাঁচাতে অর্ধশতাধিক পাখি শিকারের প্রকৃত তথ্য গোপন করেন বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন। এর সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, বনপ্রহরী মোতাহার হোসেন প্রায়ই পাখি শিকারে জড়িত কাউকে আটক করলে উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *