হাইকমান্ডের হুঙ্কার আমলে নিচ্ছেন না সিলেট বিএনপির নেতারা!

সিলেট

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও।মেয়র পদে বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন করবেন কি-না তা খোলাসা না করলেও সাধারণ ৪২টি ও সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলটি শতাধিক নেতা ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির শীর্ষসারির কয়েকজন নেতাও রয়েছেন, যাঁরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হচ্ছেন।

এদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ তৌফিকুল হাদী ও সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রোকসানা বেগম শাহনাজ। এছাড়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল,  সংরক্ষি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শাহানা বেগম শানু, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন আসন্ন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

সব মিলিয়ে নগরীর সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নিজেদের ওয়ার্ডে ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন তারা। অনেকে পাড়ায় পাড়ায় সমর্থক ও ভোটারদের নিয়ে উঠোন বৈঠকও করছেন। এছাড়া গত রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ ও ইফতার পার্টি আয়োজনের মাধ্যমেও সরব ছিলেন বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী সদ্য বিদায়ী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

কাউন্সিলর রেজাউল হাসান বলেন, ‘কাউন্সিলর পদের নির্বাচন দলীয় কোন বিষয় নয়। এটি দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। এ পদে প্রার্থীরা ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেন’।

তিনি বলেন, আমি এই ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর। দলমত নির্বিশেষে সবাই আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। ফলে এখানে আমার দলীয় পরিচয় মূখ্য নয়।

কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। তাই এমন প্রার্থীদের দলীয় পরিচয়ে দেখার কিছু নেই। আমি একটি দল করলেও, কাউন্সিলর হিসেবে সবসময় দলমতের ঊর্ধ্বে থেকেছি। ফলে নির্বাচনের সময়ও আমার দলীয় পরিচয় কোন বাধা হবে না’।

২৫. ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, ‘এলাকার মানুষজন আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব না’।

৪০নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হতে আগ্রহী স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল হাছিব। তিনি বলেন, ‘দলের পরিচয়ের চাইতেও বড় পরিচয় আমি এই এলাকার সন্তান। এলাকা ও এলাকাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থেই আমি রাজনীতি করি। একই কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এক্ষেত্রে দলীয় পরিচয় মুখ্য না। কাউন্সিলরদের ব্যাপারে দলেরও নমনীয় হওয়া উচিত’।

বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই যাবে না। আমরা এখন সরকার পতনের আন্দোলনে আছি। আমাদের প্রত্যাশা, বিএনপির কোনো নেতা সরকারের ফাঁদে পা দেবেন না। তারপরও যদি কোনো নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়, তাহলে দলীয় হাইকমাণ্ড সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী,  ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিলেটসহ পাঁচ সিটিতে নির্বাচনের বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন বর্জনের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে, কোনো ‘কৌশলের আশ্রয়’ নিলে তাঁর বিরুদ্ধে এবং কেউ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নেপথ্যেও সম্পৃক্ত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। তাঁরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *