হাকালুকির হাওরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা : ৭লক্ষ টাকা মূল্যের দুটি জাল জব্দ

সিলেট

রাসেল আহমদ, (গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি):

গোলাপগঞ্জের হাকালুকির হাওর থেকে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ নিধনের দায়ের অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। অভিযানকালে উপজেলার শরীফগগঞ্জ ইউনিয়নের খাটখাই সীমানায় হাওর থেকে ৭ লক্ষ টাকা মূল্যের দুটি জাল ও দুটি নৌকা জব্দ করেন উপজেলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট। জাল দুটি উপজেলা প্রশাসন নিয়ে আসলেও জব্দকৃত দু’টি নৌকা স্থানীয় ইউপি সদস্যদের জিম্মায় রাখা হয়েছে।
দেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকির হাওর থেকে অবৈধ ভাবে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র মাছ নিধন করছে এমন দরখাস্তের প্রেক্ষিতে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার একদল পুলিশ নিয়ে অভিযানে যায় উপজেলা প্রশাসন।
অভিযানকালে অবৈধ মাছ শিকারীদের আটকানোর চেষ্টা করেন স্থানীয়রা। এসময় জেলেদের ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত হন দু’সহোদর। এরমধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। আইনশৃঙ্গল বাহিনীর সহযোগীতায় তাদেরকে দ্রæত উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। আহতরা হলেন শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের খাটখাই গ্রামে বাহার উদ্দিনের পুত্র আব্দুর রহমান(৪০) ও আব্দুস সামাদ(৩০)। জেলেদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন আব্দুস সামাদ। অপরদিকে অবৈধ মাছ শিকারীদের হামলায় একটি হাত ভেঙে যায় আব্দুর রহমানের। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন কর্বত্যরত চিকিৎসক।
মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি), এক্সিকিউটিভ নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট অভিজিৎ চৌধুরী। অভিযানে অংশগ্রহন করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হাসান, গোলাপগঞ্জ মডেল এসআই আশীষ তালুকদারসহ একদল পুলিশ।
গত ২৪ জুলাই পনাইরচক এলাকার জামাল উদ্দিন হাকালুকির হাওরে দেশীয় মাছ রক্ষার্থে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য একটি দরখাস্ত দায়ের করেন। দরখাস্তে খাটখাই গ্রামের মইজ উদ্দিনের পুত্র সেলিম উদ্দিন, পনাইরচক গ্রামের মত তমছির আলীর পুত্র নোমান উদ্দিন ও পনাইরচক গ্রামের দুদু মিয়ার পুত্র সাব উদ্দিনের নাম উল্লেখ করেন। তাদের নেতৃত্বে অবৈধ ভাবে মাছ নিধন চলছে বলে উল্লেখ করা হয়। দরখাস্তটি গোলাপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি), উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে অনুলিপি জমা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল পরিচালনা করা হয়।
আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সাথে আলাপকালে তারা জানান, অবৈধ ভাবে মাছ নিধন বন্ধ করতে বার বার চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন । উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার খবরে তারা অবৈধ মাছ শিকারীদের আইনের হাতে তুলে দিতে চেষ্টা করেন। এতে অবৈধ মাছ শিকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। একই পরিবারের দু’সহোদর আহতের বিষয়টি নিয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তারা জানান।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধ ভাবে মাছ নিধন করে প্রতিদিন লক্ষাধিক ও এর বেশী মূল্যে মাছ ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারসহ সিলেটের কাজির বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হত। অবৈধ জালে রেণু পনা থেকে শুরু করে সব ধরনের মাছ আটকা পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগ নেতা এনামুল হক প্রতিবেদককে জানান, প্রতি বছর স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র অবৈধ ভাবে হাকালুকির হাওর থেকে মাছ নিধন করে আসছে। স্থানীয়রা এতে বাধা বিপত্তি করলেও তাদের কর্নপাত হয়। যে জাল দুটি জব্দ করা হয়েছে সেগুলোর মালিক দরখাস্তে উল্লেখিত ব্যক্তিগণ। প্রতিদিন জাল দুটি দিয়ে মাছ শিকারের জন্য ৫ থেকে ৬শ’ টাকা রোজে প্রায় ৩০ জন কাজ করতেন। এতে তারা ৪টি নৌ কা ব্যবহার করত।
এসময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হাসান বলেন, দরখাস্তের প্রেক্ষিতে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। দুজি জাল জব্দ করা হয়েছে। এটিকে মাহা জাল বলা হয়, জীববৈচিত্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই জাল মাছ, রেনু, পনা ডিম সব কিছুর জন্যই ক্ষতিকর। এতে সব কিছু আটকা পড়ে। আমরা পরবর্তীতে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিনার ইনচার্জ হারুনুর রশীদ জানান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজেস্ট্রিট এর সাথে আমাদের একদল পুলিশ ছিল। আহতদের সহযোগীতা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরন করা হয়েছে। তবে এখনো এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *