
সিলেট নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে প্রতিদিনই চলছে যানজট, বিশৃঙ্খলা ও নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা। আধুনিক যুগে যেখানে বিশ্বের শহরগুলোয় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল লাইটের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়, সেখানে সিলেট এখনো পড়ে আছে ‘অন্ধকার যুগে’। এখনো হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে নগরীর মোড়ে মোড়ে—যা একদিকে পুলিশের জন্য দুর্ভোগ, অন্যদিকে নগরবাসীর জন্য ভোগান্তি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক লাইট থাকলে যান নিয়ন্ত্রণে বিশৃঙ্খলা অনেকটাই কমে আসবে। রাস্তায় চলাচল হবে শৃঙ্খলাপূর্ণ, কমবে দুর্ঘটনা, বাঁচবে কর্মঘন্টা এবং দুর্ভোগ লাঘব হবে ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু দীর্ঘ তিন দশকেও সিলেটবাসী সেই আলোর দেখা পাননি।
১৯৯৬ সালে পৌরসভা থাকাকালে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর ছয়টি ব্যস্ততম মোড়ে—চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার, নয়াসড়ক, সুরমা মার্কেট, নাইওরপুল ও আম্বরখানায়—লাল, হলুদ ও সবুজ সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ওই বাতিগুলো কয়েক মাস সচল থাকলেও পরে একে একে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আর কোনো মেরামত বা নতুন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ফলে আজও সিলেট নগরীতে ট্রাফিক পুলিশকে রোদ-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এতে ট্রাফিক সদস্যদের শারীরিক পরিশ্রম যেমন বেড়েছে, তেমনি যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তিও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “সিলেটকে বলা হয় দ্বিতীয় লন্ডন, কিন্তু এখানকার ট্রাফিক ব্যবস্থার অবস্থা এখনো অন্ধকার যুগের মতো। বিশ্বের সব জায়গায় ট্রাফিক লাইটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হয়, কিন্তু সিলেটে এখনো হাতের ইশারায় চলছে এই কার্যক্রম। রোদ-বৃষ্টির মধ্যে আমাদের ট্রাফিক সদস্যদের দাঁড়িয়ে ইশারা করতে হয়। লাইট থাকলে দুর্ভোগ কমতো, আর যানবাহন নিয়ন্ত্রণও আরও সহজ ও গতিশীল হতো।”
তিনি আরও জানান, “বিভিন্ন মিটিংয়ে আমরা বারবার ট্রাফিক লাইট স্থাপনের বিষয়ে বলেছি, চাহিদাপত্রও দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”
তিনি অভিযোগ করেন, “সিলেট নগরীতে ট্রাফিক বান্ধব একটা পয়েন্টও নেই।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, “অনেক আগে ট্রাফিক লাইট বসানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগ বিষয়টি নিয়ে আন্তরিক নয়। অথচ যানজটের কারণে প্রতিদিন কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর যানজট নিরসনে স্থায়ী সমাধান আনতে হলে দ্রুত আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট চালু করা জরুরি। সময় এসেছে সিলেটকে হাতের ইশারা নয়, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির আলোয় ফেরানোর—যাতে ‘দ্বিতীয় লন্ডন’ খ্যাত এই শহর সত্যিই আধুনিক নগরীতে পরিণত হয়।
তাছাড়া এখন কেবল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি নয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সিগন্যাল লাইট স্থাপন করা প্রয়োজন বলে করছেন সিলেটের সচেতন মহল। যেনো কোন গাড়ি সিগন্যাল অমান্য করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সে গাড়ির নম্বর ও তথ্য সার্ভারে চলে যায় এবং দ্রুত গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়।
শেয়ার করুন


