হামজাকে পেয়ে শক্তিমান বাংলাদেশ

খেলাধুলা

নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবাদ সম্মেলনকক্ষ ‘ফুল হাউজ’, তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সাধারণ জাতীয় ফুটবল দলের সংবাদ সম্মেলন এমনটা হয় না। এতটা আগ্রহ আর উদ্দীপনার সংবাদ সম্মেলন আগে দেখা যায়নি। তবে দলীয় অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া কিংবা প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরাকে ঘিরে নয়, সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন দেওয়ান হামজা চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফুটবলার বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, তাই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনটাও গতকাল বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকল। সংবাদ সম্মেলনজুড়ে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয়েছে হামজাকে ঘিরেই। হামজার প্রসঙ্গে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অধিনায়ক ও কোচ। পরে হামজা নিজেও নিজের প্রত্যাশা আর লক্ষ্যে কথা বলেছেন। সব শেষের আর্কষণ হিসেবে মাইক্রোফোন হাতে প্রথম প্রশ্নের উত্তরের শুরুতে সবাই সালাম দিলেন হামজা। একপর্যায়ে বললেন, ভারতের বিপক্ষে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী তিনি। বাংলাদেশে পা রাখার পর থেকেই ভারতের বিপক্ষে জয়ের লক্ষ্যের কথাটাই বারবার বলে আসছে এই তারকা ফুটবলার।

২৫ মার্চ শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ এটি। এ ম্যাচ খেলার লক্ষ্যে আজ সকাল ৯টায় ভারতের বিমানে চড়বেন হামজা, জামালরা। ভারত যাত্রার আগে হামজাকে ঘিরেই সব উন্মাদনা তৈরি হয়েছে ফুটবলে। যাকে ঘিরে এই উন্মাদনা তৈরি হলো, তার চাপও তো থাকার কথা? যদি ভারতের বিপক্ষে জয় আসে, তাহলে সবাই বলবে হামজা ভালো। খারাপ করলে বলবে হামজা ব্যর্থ। এজন্য কোনো ধরনের চাপ কাজ করছে কি না?Ñএমন প্রশ্নের জবাবে হামজা বললেন, ‘না, আমি এমনটা মনে করি না।’ ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলছেন ডেনমার্ক প্রবাসী জামাল ভূঁইয়া। বাংলাদেশের থিতু হয়েছেন, দলের অধিনায়কের দায়িত্বও পেয়েছেন। হামজারও লক্ষ্য বাংলাদেশের হয়ে অনেক বছর খেলতে চান। হামজা বলেন, ‘আমাদের দারুণ একটি দেশ। আমরা যা চাই, তা অর্জন করতে পারি। শুধু আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং ওই পর্যায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হবে। আমাদের তাড়াহুড়োর নেই। আমরা অনেক সময় পাব (উন্নতির জন্য)। আমি বাংলাদেশের হয়ে অনেক বছর খেলব। ইনশাআল্লাহ।’

ভারত সফরের আগে মাত্র একদিন জামালদের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে হামজার। এই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার মনে করেন, বাংলাদেশের হয়ে অনেক দিন ধরে খেলছেন জামালরা। তারা অভিজ্ঞ। তাই তাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারবেন হামজা। তিনি বলেন, ‘দিনশেষে আমি ভিন্ন লিগ থেকে এসেছি। আমি ভিন্ন স্টাইলের ফুটবল খেলি। এখানে যে খেলোয়াড়রা আছেন, যেমন অধিনায়ক জামাল, তারা আন্তর্জাতিক ফুটবলে আমার চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতা অনেক এগিয়ে দেয়। তাই আমি তাদের কাছ থেকে এখানে শিখতে পারব। ইনশাআল্লাহ সফল হতে পারব এবং একটা ধাপ এগিয়ে যেতে চাইব।’ ভারত ম্যাচে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হামজা। গত ২৫ বছর ধরে ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। জয়ের খরা কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয় হামজার কণ্ঠে ‘আমি খুবই আশাবাদী এবং রোমাঞ্চিত। এক সপ্তাহ ধরে আমার ও কোচের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছে। সে আমাকে অনেক ভিডিও ক্লিপস দেখিয়েছে। আমি অবাক হয়েছি। দলের টেকটিক্যাল সামর্থ্য দেখে যেভাবে প্রতিপক্ষে বিপক্ষে খেলবে। তাই আমি আশাবাদী যে, আমি দলকে কিছু দিতে পারব।’

হামজা দলে থাকায় ভারতের বিপক্ষে জয়ের সুযোগ দেখছেন বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী। উচ্চপর্যায়ে খেলার জন্য আমাদের খেলোয়াড়রা অভিজ্ঞ। নিশ্চয় আমাদের জয়ের সুযোগ রয়েছে।’ হামজা কতটা প্রভাব ফেলতে পারে? কাবরেরা বলেন, ‘সে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। নিশ্চয় সে দলে প্রভাব ফেলবে। তবে আমি মনে করি, দীর্ঘসময় দলে সঙ্গে হামজাকে থাকা প্রয়োজন। আমরা এখন ম্যাচের দিকে ফোকাস দিচ্ছি। ভালো খবর হলো দলে এখন হামজা। আমাদের প্রথম মিশন হলো ভারতে জেতা।’ প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারতকে সমীহ করেন কাবরেরা। তিনি বলেন, ‘সাউথ এশিয়ায় র‌্যাংকিং বিবেচনায় তারা শক্তিশালী দল। গ্রুপে তারা ফেভারিট। কিন্তু আমরা প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্য অনুশীলনে কাজ করেছি। গত বছর খেলোয়াড়রা ভালো করেছে। সব মিলিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ একাদশে হামজাকে খেলালে কাকে বাদ দেবেন? এমন উত্তরে কাবরেরা কূটনৈতিক উত্তর দিলেন, ‘আমাদের এখনো পাঁচটি ট্রেনিং সেশন বাকি। আমরা পরিকল্পনা করছি। এখনো চূড়ান্ত লাইনআপ তৈরি হয়নি। শেষ সেশন শেষেই লাইনআপ চূড়ান্ত করব আমরা।’ হামজাকে মধ্য মাঠে রেখেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন স্প্যানিশ কোচ কাবরেরা। তবে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে নাকি বক্স টু বক্স খেলাবেন হামজাকে এ ব্যাপারে অনুশীলন সেশন শেষ হওয়ার পর আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বাংলাদেশ কোচ।

এদিকে হামজাকে পেয়ে রীতিমতো মুগ্ধ বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। সংবাদ সম্মেলনে তো হামজাকে বাংলাদেশের লিওনেল মেসি বলেই ঘোষণা দিয়ে বসলেন। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হওয়া উত্তাপটা বেশি। এর মধ্যে আবার ইংলিশ লিগ মাতানো ফুটবলার হামজা দলে আছেন। জামাল বলেন, হামজা যোগ দেওয়ায় দলে শক্তি বেড়েছে। সবাই চায়, বাংলাদেশকে জিততে হবে। ভারত ম্যাচের জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে। যখন আমরা ভারতে যাব, আমি মনে করি, ভারতেও দ্বিগুন সংখ্যক সাংবাদিক হাজির হবে। যদি আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলি, একই রকম হবে। ভারত, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ সবসময় উত্তাপ ছড়ায়। এই ম্যাচটি হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ। আপনারা সবাই খুশি, কারণ হামজা এসেছে। এটা আমার জন্যও ভালো লাগছে। তবে আমরা ম্যাচের দিকেই ফোকাস দিচ্ছি। আমাদের মনোযোগ মিডিয়া কিংবা কে দলে এলো সেদিকে নয়, আমাদের ফোকাস খেলায়।’ হামজাকে ঘিরে তৈরি হওয়া উন্মাদনায় পেছনের স্মৃতি মনে পড়ে যায় জামালের। তিনি বলেন, ‘আসলে আমি যেটা (ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে আসা) শুরু করেছি, সেটা অন্য ফুটবলারদের জন্য প্রেরণা জুগিয়েছে। তারা (হামজারা) আসছে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে। আর হামজা তো বাংলাদেশের মেসি।’ অবসর ভেঙে ভারত দলে ফিরেছেন সুনিল ছেত্রী। বাংলাদেশ দলে আছেন হামজা। এই দুই তারকা মধ্যেই কী লড়াইটা হবে? জামাল বলেন, ‘সুনিল খুবই ভালো খেলোয়াড়। দেশের জন্য অনেক সাফল্য এনে দিয়েছে। তবে এটা সত্য যে, হামজা প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *