হামলা করতে গিয়ে পড়ে নাক ফাঁটল আইনজীবীর

সিলেট

গত বছর ফাও ডাব খাওয়া এবং ডাব ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন একাত্তরের কথার ফটোসাংবাদিক মিটু দাস জয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডাব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে মিটু দাস জয় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ইসলাম আলী, তার ভাই ও ডাব ব্যবসায়ীদের উপর প্রকাশ্যে হামলা করেন। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে সখ্যতার কারণে উল্টো ইসলাম আলী ও তার ভাইদের হামলাকারী দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মিটু দাস জয়।  

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই মামলার (নং-২১৬/’২২) শোনানী ছিল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। গত দু’টি তারিখে অভিযুক্তরা হাজির হলেও বাদি পক্ষ হাজির না হওয়ায় মামলাটি খারিজের পর্যায়ে চলে আসে। এ কারণে এদিন বাদি পক্ষ আদালতে হাজিরা দিতে যান। তারা অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিনসহ আইনজীবীদের নিযুক্ত করেন। যারা নিষিদ্ধ একটি উগ্রপন্থি সংগঠনের সাবেক ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। আদালতে শোনানীকালে বাদি পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্কে পেরে না ওঠায় আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের দিকে চড়াও হন। আদালতে বিচারকের সামনেই উল্টো দিকে ফিরে উত্যক্ত বাক্য উচ্চারণ করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী তাজ উদ্দিন আহমদ। তিনি আসামি পক্ষের আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনে উবাউক্কা, আফনে কিতা, ইকানো মাতইন’। তখন আসামি পক্ষের আইনজীবী নিজেকে সংযত রেখে বলেন, আপনাদের যা বলার আদালতকে বলুন। আদালতে বসা বিচারককে পেছনে মোড় দিয়ে এভাবে কথা বলা আদালত অবমাননার শামিল।

এরপর উভয় আইনজীবী আদালত থেকে বেরিয়ে আসেন। একপর্যায়ে বাদি পক্ষের আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীকে ধাক্কা দিতে গেলে নিজেই পড়ে গিয়ে নাকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তাক্ত হন তাজ উদ্দিন আহমদ। এমন সময় সাংবাদিকের লেবাসধারী নিষিদ্ধ উগ্রপন্থি সংগঠনের সাবেক ক্যাডার মঈন উদ্দিনসহ সন্ত্রাসীরা আদালতের বারান্দায় অ্যাডভোকেট জামানকে আক্রমন করেন। তাদের আক্রমনে হাতে ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান। তা দেখে সতীর্থ আইনজীবী ও সাধারণ লোকজন হামলাকারীদের প্রতিরোধ করেন। এমতাবস্থায় ওই মামলার বাদি মিঠু দাস জয় ও তার পক্ষে অবস্থান নেওয়া নিষিদ্ধ উগ্রপন্থি সংগঠনের সাবেক ক্যাডাররা পালিয়ে যান। এখানেই শেষ নয়, অনাকাক্সিক্ষত এই ঘটনাকে আদালত পাড়ার বাইরে এনে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করছে একটি মহল। যাদেরকে সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠনের কর্মী-সমর্থক বলে চেনেন।

তারা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামানকে বিএনপি নেতা, সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছেন। এছাড়া মামলার আসামি ইসলাম আলী দৈনিক সোনালী কন্ঠের ব্যুরো প্রধান, নিজাম উদ্দিন শ্যামল সিলেটের স্টাফ রিপোর্টার, হিলাল উদ্দিন শিপু ল’ কলেজ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের আহŸায়ক ও আহমদ আলী ডাব ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হলেও তাদের ‘জামান বাহিনীর সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। অথচ মামলার বাদি মিঠু দাস জয়ের বিরুদ্ধেও আদালতে চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এই মামলার বাদি সাংবাদিক ইসলাম আলী।

উগ্রপন্থি সংগঠনের সাবেক ক্যাডার ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিনকে আপাদমস্তক সাংবাদিক বানিয়ে আদালত কেন্দ্রিক মামলার বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিনের পক্ষে রাজনৈতিক ময়দানে তার সাবেক সতীর্থরা একাট্টা হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য প্রচার করছেন। আর তাদের এই অজানা ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে পোস্ট শেয়ারের কমেন্টবক্সে বাজে মন্তব্য করে যাচ্ছেন। এছাড়া নিষিদ্ধ উগ্রপন্থি সংগঠনের ঘরনার সাংবাদিকদের নিয়ে স¤প্রতি গঠিত সিলেট মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এসএমইউজে)-র সদস্য করা হয়েছে তাজ উদ্দীনকে। এই সংগঠনের গুটিকয়েক সাংবাদিকও বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাজ উদ্দিনকে দৈনিক শুভ প্রতিদিন পত্রিকার সহকারি সম্পাদক উল্লেখ করলেও পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক সরওয়ার হোসেন এ নামে পত্রিকায় কোনো সাংবাদিক নেই বলে জানিয়েছেন।

মামলা নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও এসব বিষয় সমাধান করেছে আইনজীবী সমিতি। বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি নিয়েও আইনজীবী সমিতি তাৎক্ষণিক জরুরি বৈঠক করে সমাধান প্রক্রিয়ায় থাকলেও বাইরের মহল বিশেষ ঘটনাকে রঙ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিনকে সাংবাদিক দেখিয়ে ইস্যু তৈরীর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। অথচ আইনজীবী সমিতির বিধিমতে, যারা আইনপেশায় যুক্ত থাকবেন, তারা অন্য কোনো পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না।

এ বিষয়ে সিলেটের সাবেক সিনিয়র সাংবাদিক বর্তমানে আইন পেশায় যুক্ত অ্যাডভোকেট ময়নুল হক বুলবুল তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট সামছুজ্জাম জামান ভাইয়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া অনাকাংখিত ঘটনায় সৃষ্ট বিরোধ সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির আভ্যন্তরিন বিষয়।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘এটা আদালতের ভেতরে পক্ষগনের বিষয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দ্রæত কাজ করেছে। এ বিষয়টাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরীর চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। অতি রক্ষনশীল ও রাজনৈতিক প্রভাবে দুষ্টচক্র এই আভ্যন্তরিন বিরোধকে উষ্কানি দিতে সন্ত্রাসী হামলা বা রাজনৈতিক হামলার রঙ লাগাতে ব্যাস্ত। এটা প্রতিবাদ নয় ঘরের বিরোধকে বাইরে আনার চেষ্টা, এতে মঙ্গল নেই। এটাকে সিলেট জেলা আইনজীবি সমতিকে সমাধান করতে দিন, এতেই মঙ্গল।”

অভিযোগের বিষয়ে অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বলেন, ‘মামলার শোনানীতে যুক্তিতর্কে না পেরে আমাকে থামাতে আদালতে বিচারকের সামনে বাদি পক্ষের আইনজীবী আমার সঙ্গে অশালীন অঙ্গভঙ্গিমায়, মুখের উপর আঙ্গুল এনে অকথ্য ভাষা ব্যবহার শুরু করেন। আমি তাদের বিচারকের দিকে দৃষ্টি দিতে বলি। কিছু বলার থাকলে বিচারকের সম্মুখে পেশ করতে বলি। এরপর তারা বেরিয়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এক পর্যায়ে হামলা করেন। তখন বহিরাগত কয়েকজন তাদের পক্ষে আমার উপর হামলা করলে আমি মাথায় ও হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হই। তখন সতীর্থ সহকর্মী ও উপস্থিত আমার ক্লায়েন্টরা আমাকে রক্ষা করেন। বিষয়টি সিসি ক্যামেরায় দেখলে খোলাসা হয়ে যাবে।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *