১২ দিন পর পরিবার জানতে পারে— ‘ফয়সাল আর নেই’

জাতীয়

গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতার সময় গুলিতে ফয়সাল সরকার (১৯) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের খোঁজ না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় তার লাশ। ১২ দিন পর গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) পরিবার জানতে পারে— ফয়সাল আর নেই। তবে তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে এই তথ্যও জানা নেই কারও।

নিহত ফয়সাল সরকার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর গ্রামের মো. সফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে। তিনি এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। এরই মধ্যে আট বিষয়ে পরীক্ষা শেষ করেছে। পাশাপাশি সংসারের অভাব ঘুচাতে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজও করতেন। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবার নিয়ে থাকতেন রাজধানীর আবদুল্লাহপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।

নিহত ফয়সালের বোন রোজিনা আক্তার বলেন, গত ১৯ জুলাই বিকেলে আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয় ফয়সাল। সন্ধ্যার পর তার নম্বরে একাধিকবার ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করি। বাইরে তখনো গোলাগুলি চলছিল। কোথাও খোঁজ না পেয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণখান থানায় জিডি করি। ১২ দিন পর বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিলে তারা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা মরদেহগুলোর ছবি দেখালে সেখানে ফয়সালের ছবি দেখতে পাই।

কোথায় দাফন করা হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি জানান, ১০ থেকে ১৫টি লাশ একসঙ্গে গণকবর দেওয়া হয়েছে, কাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তা জানাতে পারেনি আঞ্জুমান মুফিদুল কর্তৃপক্ষ।

নিহত ফয়সালের বাবা সফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছয় মেয়ের পর ফয়সালের জন্ম হয়েছে। ফয়সাল লেখাপড়ার পাশাপাশি শ্যামলী বাসে পার্টটাইম সুপারভাইজারের কাজ করে সংসার চালাত। এখন আমার পুরো সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। কারা আমার ছেলেকে হত্যা করল? কী দোষ ছিল আমার ছেলের, সে তো কোনো রাজনীতি করত না, পেটের দায়ে বাসে কাজ করত। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো? এই বিচার আমি কার কাছে দেব?

কাঁদতে কাঁদতে নিহত ফয়সালের মা হাজেরা বেগম বলেন, ওরা গুলি করে আমার ফয়সালের মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছে। আমি আমার সন্তানের লাশ ছুঁয়ে দেখতে চাই। এখন আমার সংসার চালাবে কে? ফয়সালকে হারানোর শোকে পুরো পরিবারের এমন আহাজারির মাতম ওঠেছে ওই এলাকায়।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, ঢাকায় সহিংসতায় দেবিদ্বারের এখন পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন। সবার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ফয়সালের পরিবারকেও সহযোগিতা করা হবে। আমি শিগগিরই পরিবারটির সঙ্গে দেখা করব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *