দীর্ঘ ১৪ মাসেও সচল হয়নি হবিগঞ্জের মাধবপুরের শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। দুটি ট্রান্সফরমার ক্রয়ের টাকা না পাওয়ায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে উৎপাদনে আসে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ১ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন।
৩৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১৬.৬৩ একর ভূমিতে স্থাপনে মোট ব্যয় হয় ২৮শ কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ২শ ৭১ টাকা। এর পর থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয় ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিছুদিন পর ১১০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২০২২ সালের ২৯ মে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তিনটি ট্রান্সফরমারের মাঝে দুটি পুড়ে বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকে ১৪ মাস ধরে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে।
শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এ দুটি ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে ৪৫ কোটি টাকার প্রয়োজন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রাকৃতিক গ্যাস। কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে ২ টাকা ৮৪ পয়সা খরচ হয়। একই সময়ে সরকারি অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৭ টাকা ৯৫ পয়সা। অর্থাৎ গ্যাসচালিত এ কেন্দ্রটি চালু থাকলে প্রতি প্রতি ইউনিটে সাশ্রয় হবে ১৫ টাকা ১১ পয়সা।
কেন্দ্রটির ৫২ ভাগ প্লান্ট ফ্যাক্টর ধরে দেখা গেছে, একই পরিমাণ ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের বদলে শাহজিবাজার কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিলে দৈনিক ১০ কোটি ৮৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা সাশ্রয় হতো। অর্থাৎ কেন্দ্রটি মাত্র ৪ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে যে সাশ্রয় হতো সেই পরিমাণ টাকা দিয়েই এটি সংস্কার করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে শাহজিবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার শফি উদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমানে ৬০ মেগাওয়াটের গ্যাস টারবাইন চলমান আছে, এটা ৬০ মেগাওয়াট হলেও আপাতত ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা জাতীয় গ্রিডে দিতে পারতেছি। ৩৩০ মেগাওয়াট ইউনিটগুলো চালু করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
কবে নাগাদ চালু হবে তা জানতে চাইলে তিনি জানান, ট্রান্সফরমার ক্রয়ের জন্য ৫ মাস আগে প্রস্তাব বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় প্রেরণ করা হয়েছে। কবে চালু করা হবে আসলে এখনও বলা যাচ্ছে না।
১৯৬৮ সালে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজারে স্থাপিত হয় প্রথম গ্যাস টারবাইন। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ “পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, (বর্তমানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড)”-এর অধীনে শাহজিবাজার বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৪.৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে আগস্ট মাসের মধ্যে আরও ছয়টি গ্যাস টারবাইন ইউনিটের মাঝে চারটি ইউনিটের প্রতিটির ক্ষমতা ছিল ১৫ মেগাওয়াট এবং যাদের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিইএম, ফ্রান্স উৎপাদন শুরু করে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম তিনটি ইউনিটের প্রতিটির ক্ষমতা ১৪.৮ মেগাওয়াট এবং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইতালির ফিয়াত। প্রতিটির ক্ষমতা ছিল ১৫ মেগাওয়াট এবং যাদের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিইএম, ফ্রান্স। ১৯৬৯ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মোট উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ১০৪.৪ মেগাওয়াটে। এটিই ছিল সেই সময় দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাতটি ইউনিটের লাইফটাইম শেষ হওয়ায় স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলায় মোট ১৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন। কিন্তু কিন্তু পাওয়া যায় ১১১ মেগাওয়াট। ঘাটতি রয়েছে ৬৬ মেগাওয়াট।
শেয়ার করুন