ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং তাণ্ডবে দেশের পাঁচ জেলায় অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয় গাছ ভেঙে ও দেয়াল ধসে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ঝড়ো হাওয়া আর ভারী বর্ষণ শুরু হয় উপকূলের জেলাগুলোতে।
একাত্তরের প্রতিবেদক, প্রতিনিধি, সাংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন-
কুমিল্লা এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যু
ঝড়ের কবলে পড়ে কুমিল্লায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাত ১০টার দিকে জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখান পশ্চিম পাড়ায় গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পরে এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়।
হেসাখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, নিহতরা হলেন- হেসাখাল পশ্চিম পাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী এবং তাদের মেয়ে চার বছরের শিশু নুসরাত আক্তার লিজা।
ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ভোলা, চার মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার বিভিন্ন জনপদ লণ্ডভন্ড হয়েছে।
সোমবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ঝড় বাতাসে জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দুই শর্তাধিক ঘরবাড়ি দোকানপাট গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় গাছ চাপাসহ আঘাত পেয়ে ও পানিতে ডুবে ভোলা সদর উপজেলা, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদের মধ্যে ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের মেইকার বাড়িতে ঘর চাপায় মফিজল ইসলাম (৬০), দৌলতখান উপজেলায় বিবি খাদিজা (২০), লালমোহন উপজেলার লড হাডিঞ্জ ইউনিয়নে ফাতেমা বাদ গ্রামে পানিতে ডুবে রাবেয়া (৩০)
ও চরফ্যাশন উপজেলার হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় গাছের ডালে আঘাত পেয়ে মনিরসহ (৩০) চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে জোয়ারের অস্বাভাবিক পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ফসলি জমি এবং মাছের ঘের। বিদ্যুৎ বিছিন্নসহ দুর্বল হয়ে পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক।
ভোলা-চরফ্যাশন ও ভোলা-দৌলতখান আঞ্চলিক সড়কে বড় বড় গাছ ভেঙে পড়েছে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
রাজধানীতে দেয়াল ধ্বসে একজনের মৃত্যু
সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে ঢাকার হাজারীবাগে দেয়াল ধসে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় জিগাতলার মনেশ্বর রোডে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক মোটরসাইকেল চালক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, স্থানীয় লোকজন দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এলে রিকশাচালককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির নাম পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
আহত মোটর সাইকেল চালককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবে দুই মৃত্যু
এদিকে সিরাজগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সৃষ্ট ঝড়ে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার সয়দা ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- পূর্ব মোহনপুর গ্রামের খোকন সেখের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।
সয়দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম জানান, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দুই ছেলেসহ এক গৃহবধূ মোহনপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকাযোগে পূর্ব মোহনপুর গ্রামে ফিরছিলেন। পথে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে ঘটনাস্থলে এক ছেলের মৃত্যু হয়।
বরগুনায় গাছ চাপা পড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ঝড় বাতাসে বরগুনা সদরের সোনাখালী এলাকায় বসতঘরে গাছ উপড়ে পড়ে আমেনা খাতুন নামে ১১৫ বছরের বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত বৃদ্ধার স্বজনরা জানান, সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ঝড় বাতাসে বাড়ির পাশের চ্যাম্পল গাছ তাদের বসত ঘরের ওপর ভেঙে পড়ে। এসময় ঘর ও গাছের নিচে চাপা পড়ে আমেনা খাতুন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনা জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন। নিহতের স্বজনদের সহায়তা করা হবে। ।
গোপালগঞ্জে দুই নারীর মৃত্যু
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঝড়ে গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া ও বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী সারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮)।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল মনসুর ওই দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর গাছের চাপায় শিশুর মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গাছের চাপায় এক শিশু মারা গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশুটির মা আমেনা বেগম।
নিহত শিশুর নাম স্নেহা (১)। সে ওই উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামের হাবিবিয়া গ্রামের এডভোকেট আবদুল্লার মেয়ে
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামের হাবিবিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবপ্রিয় দাশ বলেন, স্নেহা মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল। রাত তিনটার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বাতাসে তাদের ঘরের ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়ে। এতে ঘরটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ঘরে থাকা মা-মেয়ে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে শিশুটি মারা যায়।
মুন্সীগঞ্জে গাছ চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু
মুন্সীগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বসত ঘরে গাছ ভেঙে পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বাবা ও ছেলে। তাদের মধ্যে বাবাকে উদ্ধারের পর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ও ছেলেকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী আসমা বেগম আশু ও তার শিশু কন্যা সুরাইয়া।
স্থানীয়রা জানান, রাতে আব্দুল রাজ্জাকের টিনের তৈরি ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়লে। মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয় মুসল্লিরা ফজরের নামাজে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসতঘরের নিচ ওই পরিবারের সদস্যরে উদ্ধার করেন।
শেয়ার করুন