৩০ নভেম্বরের পর আসন সমঝোতা

জাতীয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতার পাশাপাশি জোটবদ্ধ নির্বাচন করার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় জোটগত নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, গত তিনটি নির্বাচনের মতো এবারও শরিক ও মিত্রদের কিছু আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। আগামী ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমার নির্ধারিত সময়ের পর আসন সমঝোতার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। এরই মধ্যে তারা ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনে থাকা কয়েকটি দল।

বিএনপিসহ বেশকিছু নিবন্ধিত দল না এলে এবারের নির্বাচনে জোটগত লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে রয়েছে নানা মত। আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ‘ইসিতে জোটবদ্ধ নির্বাচন করার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাই জোটগতভাবেই নির্বাচন হবে। ২৯৮ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হলেও জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমন্বয় করা হবে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা জোটগতভাবে শরিকদের নিয়ে নির্বাচন করব। বিষয়টি নিয়ে নেত্রী শিগগিরই শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করা হলেও শরিকদের সঙ্গে আসন সমন্বয় করতে কোনো সমস্যা হবে না।’ এসব বিষয়ে শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোটের বিকল্প ধারা ও জাতীয় পার্টিকে মোট ৩১টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরসহ ২৩ জন, রাশেদ খান মেননসহ ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন, হাসানুল হক ইনুসহ জাসদের তিনজন, মাহি বি চৌধুরীসহ বিকল্পধারার দুজন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবং জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সংসদ সদস্য হন।

এবার জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দুটিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। এর মধ্যে কুষ্টিয়া-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। আর নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় পার্টির এ কে এম সেলিম ওসমান বর্তমান সংসদ সদস্য।

১৪ দল ও মহাজোটের অন্যান্য শীর্ষ নেতার আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ময়মনসিংহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মহিবুর রহমানকে, জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের লালমনিরহাট-৩ আসনে মতিয়ার রহমান, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে নাসিরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চট্টগ্রাম-৫ আসনে আবদুস সালাম এবং কাজী ফিরোজ রশীদের ঢাকা-৬ আসনে সাঈদ খোকনকে প্রার্থী করেছে।

একইভাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নির্বাচনী এলাকা ঢাকা-৮ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ফজলে হোসেন বাদশার রাজশাহী-২ আসনে মোহাম্মদ আলী, বিকল্পধারার মাহি বি চৌধুরীর মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নানের লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার, তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর চট্টগ্রাম-২ আসনে খাদিজাতুল আনোয়ার ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পিরোজপুর-২ আসনে কানাই লাল বিশ্বাসকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, সেটিই চূড়ান্ত নয়। একক নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এ তালিকা। আওয়ামী লীগ এখনো আগামী সংসদ নির্বাচনের কৌশল চূড়ান্ত করেনি। এখন পর্যন্ত প্রতীক বরাদ্দ না হওয়ায় মনোনয়ন পরিবর্তনেরও সুযোগ রয়েছে। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পার হলে আসন সমঝোতার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সোমবার (২৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে এখনো সমন্বয় না হওয়ায় প্রায় সব আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় ২৯৮টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করলেও জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পর আসন সমন্বয় করা হবে। আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে নির্বাচন করবে।’

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকা ঘোষণার পর নানামুখী আলোচনা হলেও আসন সমঝোতা নিয়ে আশাবাদী শরিকরা। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কালবেলাকে বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা করেই সবকিছু ঠিক করা হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব আসনে মনোনয়ন দেওয়া হলেও আমরা আশা করছি, সমঝোতার মাধ্যমে আমাদের আসন ছেড়ে দেওয়া হবে।’

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৪ সালেও আওয়ামী লীগ সব আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে আলোচনার মাধ্যমে শরিকদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হয়। আমরা জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব। নৌকা প্রতীকে করব। আওয়ামী লীগ ইসিতে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি দেয়নি। ফলে আসন ভাগাভাগির সময় এখনো আছে।’

জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। গত তিন টার্ম সমঝোতার পরে মনোনয়ন ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু এবার কেন এককভাবে আগেই ঘোষণা করা হলো, সেটার কারণ আওয়ামী লীগই ভালো বলতে পারবে। তবে আমরা আশা ছাড়ছি না।’

অন্যদিকে, তিনশ আসনে একক নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। যদিও দলটির একাধিক নেতা জানান, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *