৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারকে বলে দিতে

জাতীয়

২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে উত্তাল সময়ে জুলাই ও আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দুটি ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। এর রেকর্ড থেকে জানা যায়, তাপস ৩ আগস্ট বিদেশ যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন তাকে আটকে দিয়েছিল। তখন ফুপু শেখ হাসিনাকে কল দিয়ে অফিসারকে বলে দিতে অনুরোধ করেছিলেন তাপস।

গতকাল সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে কল রেকর্ড শেয়ার করেন জুলকারনাইন সায়ের।

ফোনালাপের রেকর্ড শেয়ার করে ফেসবুক পোস্টে জুলকারনাইন বলেন, “আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থার অন‍্যতম বেনিফিশিয়ারি ছিল তার দুই ভাতিজা, শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস, স্বয়ং শেখ হাসিনাও এদের দিয়েছিলেন লাগামহীন ক্ষমতা ও প্রশ্রয়।”

‘সম্প্রতি হাতে আসা দুটি কল রেকর্ড মনযোগ দিয়ে’ শোনার অনুরোধ জানিয়ে জুলকারনাইন বলেন, “প্রথম রেকর্ডটি ২২ জুলাই বেলা ১১.৪৯ মিনিটের, যেখানে তাপস মিষ্টি ভাষায় আবদার করছে ‘হাসুমনি একটু আসতে চাচ্ছিলাম, তোমাকে দেখতে চাচ্ছিলাম, আসবো’?”

“তখন দেশজুড়ে শতশত সাধারণ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে সেদিকে যেন এদের কারোই কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই!” পোস্টে উল্লেখ করেন প্রবাসী সাংবাদিক।

এতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, “দ্বিতীয়টি (কলরেকর্ড) ৩ আগস্ট ২০২৪ সকাল ৮.১৬ মিনিটের, ফোন করেই তাপস বলেন ‘আমি একটু সিঙ্গাপুর যাচ্ছি, যাব? হাসিনা তাকে যেতেও বললেন। কিন্তু সম্ভবত তিনি ধারণা করতে পারেননি যে তাপস দেশ ছাড়ার সকল প্রস্তুতি নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে তাকে ফোন করেছেন। যেখানে শেখ হাসিনা তাকে বলেছেন ‘তিনি মিছিল করতে মানা করেছেন, প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সবাই জমা থাকবে’, এর উত্তরে তাপস বলছেন বিদেশ যাত্রায় প্রয়োজনীয় জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার) এখনো সাইন করা হয়নি, তাই তিনি যেতে পারছেন না।”

“সবচাইতে শকিং ব্যাপারটা ঘটে, যখন দেশ থেকে পালাতে মরিয়া তাপস; শেখ হাসিনা যিনি টেকনিক্যালি তখনো দেশের প্রধানমন্ত্রী, তাকে একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে অনুরোধ করেন, ‍যেন তাপসকে যেতে দেয়া হয়।”-পোস্টে উল্লেখ করেন জুলকারনাইন সায়ের।

যা আছে কলরেকর্ডে

অডিও রেকর্ডটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর প্রথম অংশ ২২শে জুলাই বেলা ১১.৪৯ মিনিটের। তাপস মিষ্টি ভাষায় আবদার করছেন, “হাসুমনি, একটু আসতে চাচ্ছিলাম, তোমাকে দেখতে চাচ্ছিলাম, আসব?’ জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসবের মধ্যে আসার দরকার নেই।”

তখন তাপস বলেন, “তাহলে (কারফিউ) শিথিল হওয়ার পর আসি?’ হাসিনা বলেন, ‘আমি তখন অফিসে থাকব। ব্যবসায়ীদের ডাকছি তো। ২-৩টার সময়।’ তাপস বলেন, ‘আচ্ছা, তাহলে ওই সময় অফিসে এসে দেখা করে যাব।”

দ্বিতীয় পর্বে ফোন করে তাপস কুশল বিনিময়ের পর বলেন, “আমি একটু সিঙ্গাপুর যেতে চাচ্ছিলাম, যাব?”

শেখ হাসিনা তাকে বলেছিলেন, তিনি মিছিল করতে মানা করেছেন, প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সবাই জমা থাকবে।”

এর উত্তরে তাপস বলেন, “আমি এয়ারপোর্টে চলে আসছি। জিও-টা (বিদেশ যাত্রায় প্রয়োজনীয় গভর্নমেন্ট অর্ডার) এখনো হয়নাই বলে এখানে ইয়ে করছে না।”

তখন হাসিনা তাপসকে প্রশ্ন করেন, “জিওটা সঙ্গে নিলে না কেন?”

তাপস উত্তরে বলেন, “অ্যাপ্লাই করে দিছি, কিন্তু হতে হতে তো ১১টা-১২টা বাজতে পারে, মানে তোমার ওখানে যেতে। তো আমি ইমিগ্রেশনে আসছি, কাউকে ইমিগ্রেশনে বলে দেওয়া যাবে কি? আমার ফ্লাইট এখনি ছেড়ে দেবে।”

জবাবে হাসিনা বলেন, “হ্যাঁ, বলা যাবে। ফাইল পাঠাইছো তো? তখন তাপস বলেন, হ্যাঁ, ফাইল প্রমিত মহদোয় পাঠাচ্ছেন। হাসিনা বলেন, “আচ্ছা, দিয়ে দাও।’

তখন তাপস হাসিনাকে একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলতে অনুরোধ করে বলেন, ‍এই যে এখানে অফিসার আছেন, ইমিগ্রেশন অফিসার। তখন হাসিনা তাপসের কাছে জানতে চান, কাউকে বলিয়ে দিতে হবে কি না? তাপস বলেন, হ্যাঁ, আমি দিব ফোনটা? হাসিনা বলেন, “না না, আমি তার সঙ্গে কথা বলব কেন। আমি অফিসের কর্মকর্তার মাধ্যমে বলিয়ে দিতে পারি।”

তাপস জানতে চান, কাকে বলব তাহলে? হাসিনা বলেন, “আমার সেক্রেটারিকে বললেই হবে, শাহ সালাউদ্দিন।”

তাপস পুনরায় নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করেন, সালাউদ্দিন সাহেব? শেখ হাসিনা বলেন , হ্যাঁ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *