৫০ জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ৪ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল

বিশ্ব

শিশু ও নারীসহ ৫০ জন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজায় হামাসের সঙ্গে চার দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েল সরকার।

বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এক দীর্ঘ বৈঠকে যুদ্ধবিরতির ওই প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। কখন থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বা জিম্মিদের কোথায় কীভাবে মুক্তি দেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।

তবে ওই ৫০ জনের অতিরিক্ত প্রতি ১০ জন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরো একদিন করে বাড়বে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ইসরায়েলের সরকার সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য। আজ রাতে, সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে প্রথম পর্যায়ের রূপরেখা অনুমোদন করেছে, তাতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫০ জন জিম্মিকে চার দিনে মুক্তি দেওয়া হবে, এ সময় লড়াইয়ে একটি বিরতি অনুষ্ঠিত হবে।

অতিরিক্ত প্রতি ১০ জন জিম্মির মুক্তির ফল হিসেবে বিরতি একদিন করে বাড়বে। ইসরায়েল সরকার, আইডিএফ (ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী) এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, হামাসের নির্মূল সম্পন্ন করবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি নতুন কোনো হুমকি থাকবে না তা নিশ্চিত করবে।

হামাসের দাবি ছিল ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি তাদের সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। সে বিষয়ে ইসরায়েলের বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তির আওতায় তিন বছরের এক শিশুসহ অন্তত তিন মার্কিন নাগরিককেও হামাস মুক্তি দেবে বলে তারা আশা করছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, গাজায় বন্দি ৫০ জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তির সুযোগ দিতে ও অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে মানবিক ত্রাণ প্রবেশ করতে দিতে বুধবার ইসরায়েলের সরকার ও হামাস চারদিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কাতারের কর্মকর্তারা কয়েকদিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন, একটি চুক্তি আসন্ন। পাশাপাশি মার্কিন, ইসরায়েলি ও হামাসের কর্মকর্তারাও একই আভাস দিয়ে আসছিলেন।

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর বিনিময়ে ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। যুদ্ধবিরতির এ চুক্তি মানবিক ত্রাণবাহী, চিকিৎসা সামগ্রী ও জ্বালানিবাহী কয়েকশ ট্রাকের গাজায় প্রবেশ অনুমোদন করবে।

চুক্তির ঘোষণা দেওয়ার আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হস্তক্ষেপ অস্থায়ী চুক্তিটি উন্নয়নে সহায়তা করেছে আর তাতে কম ছাড়ে বেশি জিম্মির মুক্তি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

চুক্তির আলোচনার বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, এতে ১৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময় অন্তর্ভুক্ত হবে। যুদ্ধবিরতি গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশও অনুমোদন করবে।

চ্যানেল টুয়েলভ নিউজসহ ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জিম্মিদের প্রথম বৃহস্পতিবার মুক্তি দেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কোনো ইসরায়েলি নাগরিক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাতে চাইলে তাকে সুযোগ দিতে চুক্তি কার্যকর করার আগে বাধ্যতামূলকভাবে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে বলে প্রতিবেদনগুলো বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে কট্টরপন্থি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের একজন তাদের কাছে ছিল, কিন্তু ইসরায়েলের হামলায় তার মৃত্যু হয়েছে।

আল কুদস ব্রিগেডস টেলিগ্রামে বলেছে, আগেই মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম আমরা, কিন্তু শত্রু গো ধরে ছিল আর এটি তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের যোদ্ধাদের নজিরবিহীন আক্রমণে ১২০০ জন নিহত হয়। এ আক্রমণ চলাকালে প্রায় ২৪০ জনকে ইসরায়েল থেকে ধরে এনে গাজায় বন্দি করে রাখে হামাস।

কিন্তু ওই দিন থেকেই গাজায় ভয়াবহ পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ছয় সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা তাদের অবিরাম হামলায় গাজায় ১৩৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৫৬০০ শিশু ও ৩৫৫০ জন নারী রয়েছে। ইসরায়েলের বিরামহীন হামলায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *