৭ দিন বন্ধের পর বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিন থেকে এল নৌযান

জাতীয়

কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াতকারী নৌযান লক্ষ্য করে মিয়ানমার উপকূল থেকে গুলিবর্ষণের কারণে সাতদিন বন্ধ থাকার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বিকল্প পথে পুনরায় ট্রলার চলাচল শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে লোকজন টেকনাফে এসেছেন। তবে এদিন কোনো পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল করেনি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “দুপুর ১টার দিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে তিনটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক মানুষ টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেন। তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা।
বিকাল ৩টার দিকে ট্রলারগুলো টেকনাফের মুন্ডারডেইল সাগর উপকূলে পৌঁছে। কিন্তু সাগরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এসব ট্রলার থেকে লোকজনকে সরাসরি কূলে উঠানো সম্ভব হচ্ছিল না।”
ইউএনও বলেন, “পরে কূল থেকে কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকা কিছু দূরে সাগরে অবস্থানকারী ট্রলারগুলোর কাছে পাঠানো হয়। বড় ট্রলার থেকে এসব মানুষকে ডিঙ্গি নৌকায় তুলে কূলে নিয়ে আসা হয়েছে।”

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, “সাত দিন দ্বীপে মানুষ ও পণ্য আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় দ্বীপের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখন বিকল্পভাবে ট্রলার চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলছে। যে ট্রলারগুলো গেছে ওই সব ট্রলারে করে টেকনাফে থাকা দ্বীপের লোকজন ফিরে আসবে।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে গত এক মাস টেকনাফসহ উপকূলীয় এলাকা মোটামুটি শান্তই ছিল। কিন্তু ৫, ৮ এবং ১১ জুন নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারের অংশ থেকে সেন্ট মার্টিনগামী নৌযানে গুলি করা হয়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সঙ্গে টেকনাফ ও কক্সবাজারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

এর মধ্যে বুধবার দুপুরে নাফ নদীতে দেখা মিলে মিয়ানমারের নৌ-বাহিনীর জাহাজ। এরপর রাত থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসহ আশপাশের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপার হতে থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসতে শুরু করে।

বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে। দ্বীপে প্রচুর পর্যটনকেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্থলভাগ থেকে পণ্য না যাওয়ায় সেখানে খাদ্য সংকট তৈরি হয়।

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরই অংশ হিসেবে দুপুরে সেন্ট মার্টিন থেকে তিনটি ট্রলার টেকনাফে এসেছে। কিন্তু এদিন টেকনাফ থেকে কোনো ধরনের নৌযান সেন্ট মার্টিনে যায়নি বলে জানান ইউএনও আদনান।

সাধারণত সেন্ট মার্টিনগামী ট্রলার বা জাহাজ টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজঘাট থেকে ছেড়ে যায়। আবার সেন্ট মার্টিন থেকে নৌযানগুলো সেখানেই ফিরে আসে।

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিকল্প পথ হিসেবে বঙ্গোপসাগর হয়ে সাবরাংয়ের মুন্ডাডেইল উপকূলে আসছে নৌযানগুলো।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “মূলত কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে বড় জাহাজে করে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে যাবেন। এটা ব্যবসায়ী এবং জাহাজ মালিকরা মিলে করবেন। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন।

“এ ছাড়া এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে ট্রলারে যাত্রী আসা-যাওয়া করছে। ওখানে কিছু পণ্য নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে সেন্ট মার্টিনে খাদ্য সংকট হবে না।”

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *